
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ভারতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ে। যেখানে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রায় পাঁচ লাখ সেনা মোতায়েন রয়েছে, সেখানে কীভাবে এত বড় হামলা সম্ভব হলো—তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলেও।
ভারত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২০০০ পর্যটক যাতায়াত করেন পেহেলগামে। তবু হামলার সময় কিংবা তার আগে-পরে সেখানে কোনো সেনা, পুলিশ, কমান্ডো বা আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ছিল না। এমন পরিস্থিতিকে “পরিকল্পিত উদাসীনতা” বলেও অভিহিত করছেন অনেক বিশ্লেষক।
নিরাপত্তা বাহিনীর ‘অদৃশ্য’ ভূমিকা ও সরকারী অজুহাত
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্যানুযায়ী, উপত্যকায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF), বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF), ইন্দো-তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশ (ITBP), সশস্ত্র সীমা বল (SSB), এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (SOG) মোতায়েন রয়েছে। এতবড় নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও হামলার বাস্তবায়ন ভারতের গোয়েন্দা কার্যক্রম নিয়েই প্রশ্ন তুলছে।
চট্টগ্রামে ইনিংস ব্যবধানে জয়, তবে সন্তুষ্ট নন শান্ত
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, একটি বেসরকারি পর্যটন প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমতি ছাড়া ২০ এপ্রিল থেকেই পর্যটক পাঠানো শুরু করে পেহেলগামে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এত উচ্চ পর্যায়ের নজরদারির মধ্যে দু’হাজার পর্যটকের ‘গোপন আগমন’ সম্ভব নয়, এবং এই যুক্তি আদতে দুর্বল।
পুনরায় ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ সন্দেহ ও ২০১৯ সালের পুলওয়ামা প্রসঙ্গ
পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা একে ভারতের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’-এর ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার ক্ষেত্রেও ৩০০ কেজি আরডিএক্স কাশ্মীরে কীভাবে প্রবেশ করেছিল, সে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। সেই সময়ও গোয়েন্দা সতর্কতা সত্ত্বেও কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সাবেক রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতির কথা বললে প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে চুপ থাকতে বলেন। এই প্রেক্ষাপটে বর্তমান হামলাটিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে।
উসকানিমূলক রাজনীতি ও মুসলিম বিদ্বেষের উত্থান
হামলার পরপরই সরকার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও বিজেপি নেতৃবৃন্দ দেশপ্রেমের আবেগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দুজন মুসলিম নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, যদিও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে “বাংলাদেশি” পরিচয়ে ভারতীয় মুসলিমদের গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
ফাঁস হওয়া একটি নথির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, কাশ্মীর হামলায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর অভ্যন্তরীণ বিভাজন। অনেকে মনে করছেন, হিন্দুত্ববাদী কৌশলের বিরোধিতাকারী র-এর একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে এই নথি ফাঁস করেছে। এতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশনীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে।
Leave a Reply