‘পৃথিবীর স্বর্গ’ নামে খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত ও অস্থির অঞ্চল। ভারত বিভাগের পর থেকেই কাশ্মির হয়ে উঠেছে ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যকার বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু।
ভারত বিভাগের পর থেকেই সংঘাতের সূচনা
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় কাশ্মির ইস্যু অনিষ্পন্ন থেকে যায়। কাশ্মিরের তৎকালীন হিন্দু শাসক মহারাজা হরি সিং চেয়েছিলেন স্বাধীন থাকতে। কিন্তু পাকিস্তানি বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে ভারতীয় সামরিক সহায়তা চেয়ে কাশ্মির ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়, স্বায়ত্তশাসনের শর্তে।
এরপর ভারত কাশ্মিরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নেয়—জম্মু, কাশ্মির উপত্যকা ও লাদাখসহ। অন্যদিকে পাকিস্তান দখলে নেয় আজাদ কাশ্মির এবং গিলগিত-বালতিস্তান। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে কাশ্মিরের পূর্বাঞ্চল আকসাই চিন দখল করে নেয় চীন।
ভূখণ্ড বিভাজন ও সামরিক সংঘর্ষ
বর্তমানে ভারত নিয়ন্ত্রণ করছে ১,০১,৩৩৮ বর্গকিলোমিটার, পাকিস্তান ৮৫,৮৪৬ বর্গকিলোমিটার এবং চীন ৩৭,৫৫৫ বর্গকিলোমিটার কাশ্মির ভূখণ্ড।
১৯৬৫ সালে কাশ্মির ইস্যুতে আবারও যুদ্ধ বাধে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়। ১৯৭২ সালে শিমলা চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশ নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলতে সম্মত হয়। কিন্তু শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।
বিচ্ছিন্নতাবাদ ও জঙ্গি কার্যক্রম
৮০’র দশক থেকে কাশ্মিরে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ ও সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়। ভারত সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সেনা মোতায়েন করে। গত কয়েক দশকে এই সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
২০১৬ সালে উরিতে সেনা ঘাঁটিতে হামলায় নিহত হয় ১৯ ভারতীয় সেনা। এর প্রতিশোধে পাকিস্তান সীমান্তে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায় ভারত। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন সেনা নিহত হলে, ভারত জবাবে বালাকোটে বিমান হামলা চালায়।
সংবিধান পরিবর্তন ও নতুন বাস্তবতা
২০১৯ সালের আগস্টে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয় মোদি সরকার। রাজ্যটিকে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়: জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখ।
সরকার দাবি করেছে, এর ফলে অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং পর্যটন বেড়েছে। তবে বাস্তবে সন্ত্রাসী হামলা ও গুপ্তহত্যা এখনও চলমান। সর্বশেষ উদাহরণ—পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলা।
কাশ্মির নিয়ে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখনও অব্যাহত। ভূরাজনৈতিক এই জটিলতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকটে আজও কাশ্মির রয়ে গেছে অশান্ত, সহিংসতার ছায়ায়।
Leave a Reply