গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকট আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের সিংহভাগই নারী ও শিশু। শুধু বোমার আঘাতেই নয়, যুদ্ধের পরোক্ষ ফলেও আজ লাখো গাজাবাসী মৃত্যুর মুখোমুখি। তীব্র খাদ্য সংকট, অপুষ্টি, ওষুধের অভাব এবং চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে প্রতিদিন অগণিত জীবন ঝরে পড়ছে—নিরবে, নিঃশব্দে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, গাজার ৯৫ শতাংশ পরিবার পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে; প্রায় ৭০,০০০ শিশু আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শুধু পুষ্টিকর খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে। এই পরিস্থিতি নিছক দুঃখজনক নয়, এটি একটি ঘৃণ্য মানবিক অপরাধের প্রতিচ্ছবি।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে চলেছে। এই আচরণ শুধু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলোর সরাসরি লঙ্ঘন নয়, বরং তা গোটা মানবতার প্রতি উপহাসও বটে।
আজ যখন বিশ্ব সভ্যতার চূড়ান্ত দাবি করা হয়, তখন গাজার কান্না সেই দাবির পেছনের ভয়াবহ দ্বিচারিতার মুখোশ খুলে দিচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সকল মানবাধিকার সংস্থা একটি মানবিক করিডোর তৈরির আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে জরুরি খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু সেই আহ্বান আজও রয়ে গেছে রাজনৈতিক জটিলতা ও নিষ্ক্রিয়তার বলয়ে বন্দী।
এই মুহূর্তে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজোট হয়ে নিরপেক্ষ ও মানবিক ভিত্তিতে গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উচিত ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করে ত্রাণ প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতির পরিবেশ নিশ্চিত করা।
মানবিকতা কখনো জাতি, ধর্ম বা ভূগোলের সীমায় আটকে থাকে না। গাজার শিশুর কান্না আমাদের নীরবতা সহ্য করতে পারবে না। এখনই সময় জেগে ওঠার, গর্জে ওঠার—একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর।
Leave a Reply