বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এক অনন্য নাম — নিয়াজ মুর্শেদ। তিনি শুধুমাত্র একজন সফল দাবাড়ুই নন, বরং এক বিস্ময়কর কিশোর যিনি কৈশোরেই দেশকে এনে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে স্বীকৃতি। ১৯৮৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থা (FIDE) তাকে গ্র্যান্ডমাস্টার (GM) উপাধি দেয়, যা তাকে বাংলাদেশ এবং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দাবার গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়।
নিয়াজ মুর্শেদের জন্ম ১৩ মে ১৯৬৬, ঢাকায়। ছোটবেলা থেকেই তার চিন্তাশক্তি ছিল প্রখর ও বিশ্লেষণধর্মী। খুব অল্প সময়েই তিনি দাবার প্রতি তীব্র আগ্রহ দেখান। তার প্রতিভা প্রথম প্রকাশ পায় জাতীয় পর্যায়ে, মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। এরপরের গল্প শুধুই সাফল্যের, দৃঢ়তার, এবং অধ্যবসায়ের।
১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮১ এবং ১৯৮২ সালে টানা চারবার জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়ন হন নিয়াজ। ১৯৮১ সালে তিনি আন্তর্জাতিক মাস্টার (IM) খেতাব অর্জন করেন। তারপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনি প্রমাণ করেন যে একজন বাংলাদেশিও দাবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন। অবশেষে ১৯৮৭ সালে ‘গ্র্যান্ডমাস্টার’ উপাধি তার নামের পাশে যুক্ত হয় — যা ছিল এক ঐতিহাসিক অর্জন।
শুধু ক্রীড়াঙ্গনেই নয়, নিয়াজ মুর্শেদ একাডেমিক জীবনেও ছিলেন সফল। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি দাবাকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে চালিয়ে যান। এই ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের জন্যই তিনি আজ এতটা পরিপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব।
বর্তমানে নিয়াজ মুর্শেদ বাংলাদেশের দাবার একজন অগ্রপথিক এবং আইকন। তিনি নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেন। ২০১২ ও ২০১৯ সালেও তিনি জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়ন হন, যা প্রমাণ করে তার দক্ষতা ও নিষ্ঠা এখনও অটুট।
নিয়াজ মুর্শেদ কেবল একজন দাবাড়ুই নন, বরং একটি প্রজন্মের প্রেরণা। যারা দাবা বা বুদ্ধিনির্ভর খেলায় আগ্রহী, তাদের জন্য তিনি একটি চলমান কিংবদন্তি। তার জীবন আমাদের শেখায়—স্বপ্ন, প্রতিভা ও পরিশ্রম একসাথে থাকলে যে কোনো আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
নিয়াজ মুর্শেদ বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতে এক বিরল রত্ন, যিনি প্রমাণ করেছেন — চিন্তাশক্তি ও মননের খেলা দাবাতেও আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। আজ তাঁর জন্মদিনে (১৩ মে) তাঁকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।
Leave a Reply