সাধারণত একজন বিদেশি কূটনীতিকের চলাচল ও কর্মকাণ্ড থাকে নিয়ম ও প্রটোকলের আওতায়। কিন্তু সব কিছু যখন আচমকা গোপনীয়তার চাদরে ঢাকা পড়ে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠে—আসলে ভেতরে কী ঘটছে?
সম্প্রতি এমনই এক রহস্যময় মোড় নিয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফের কক্সবাজার সফর ও তার আকস্মিক ঢাকা ত্যাগের ঘটনা।
টিকিটে নাম, কিন্তু ফেরা হয়নি একসঙ্গে
৯ মে, বৃহস্পতিবার। কক্সবাজারে অবস্থান করছেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদ এবং এক নারী। টিকিট অনুযায়ী, ১০ মে রাত ৯টায় ঢাকায় ফেরার কথা ছিল তাদের সবারই। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় ঘটে নাটকীয় পরিবর্তন।
সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হাইকমিশনারের চলাফেরা ও সফরসঙ্গীদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। বিষয়টি দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সেখান থেকে পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টিগোচরে পৌঁছায়। এরপরই আসেন নির্দেশ—জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় ফিরতে হবে।
সফরসঙ্গীদের ফেলে একাই ফেরত
হঠাৎ করেই হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরলেন তার নিজস্ব টয়োটা গ্রে গাড়িতে। তার সফরসঙ্গী নারী ও আজহার মাহমুদকে তিনি রেখে গেলেন সেখানেই। এই আচরণে বিস্ময় জাগে কূটনৈতিক মহলেও।
১১ মে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাই হয়ে ইসলামাবাদে ফিরে যান। পরবর্তীতে জানা যায়, তিনি “অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে” গেছেন।
পাকিস্তান হাইকমিশনের বক্তব্য
এই ঘটনায় জানতে চাইলে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, “সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরকারি কাজে বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।”
তবে এই “সরকারি কাজ” বা “ছুটির প্রকৃতি” সম্পর্কে আর কিছু জানানো হয়নি। এদিকে কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে কানাঘুষা—এই সফরের পেছনে আদৌ কোনো সরকারি প্রেক্ষাপট ছিল কিনা।
সফরসঙ্গী নারীর বক্তব্য
গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন সফরসঙ্গী হিসেবে উল্লেখিত নারী হাফিজা হক শাহ। তিনি বলেন, “হাইকমিশনার আমার পূর্বপরিচিত। আমি কক্সবাজারে আলাদা ভ্রমণে গিয়েছিলাম। হোটেল লবিতে দেখা হয়েছিল মাত্র। আমাদের একসঙ্গে কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
তবে টিকিট ও হোটেল বুকিংয়ের তথ্য এসব দাবিকে দুর্বল করে তোলে। জনমনে প্রশ্ন জাগে—এত কাকতালীয় মিল কি আদৌ সম্ভব?
কূটনৈতিক শিষ্টাচার না অন্য কিছু?
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই সংবেদনশীল। এমন প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে একজন কূটনীতিকের আচমকা সফর এবং ফেরার ধরন কেবল শিষ্টাচারগত লঙ্ঘন নয়, বরং এতে জড়িয়ে যেতে পারে গোয়েন্দা তৎপরতার শঙ্কাও।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা আসেনি। তবে হাইকমিশনারের এ ধরনের গোপনীয়তা ঘেরা আচরণ ভবিষ্যতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।
Leave a Reply