যশোরের মনিরামপুরে পঞ্চম শ্রেণিও পাস না করা রশিদা বেগমের নামে রয়েছে ভয়াবহ অভিযোগ। নিজেকে ‘সার্জারি ডাক্তার’ পরিচয় দিয়ে দুই দশক ধরে পাইলস, টিউমারসহ নানা জটিল রোগের অপারেশন করে আসছেন তিনি। অথচ তার নেই কোনো চিকিৎসা ডিগ্রি, নেই বৈধ প্রশিক্ষণও। শুধু স্থানীয় পরিচিতি আর মৃত স্বামীর ‘প্যারামেডিকেল’ পরিচয়ের ছত্রছায়ায় এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন রশিদা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার হাজরাকাটি বেলতলায় নিজ বাড়িতেই ‘অপারেশন থিয়েটার’ গড়ে তুলেছেন রশিদা বেগম। ধারাল কাঁচি, ব্লেড ও তুলা-গজ ব্যবহার করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন অপারেশন কার্যক্রম। রোগী না এলে নিজেই কাঁচি হাতে হাজির হচ্ছেন তাদের বাড়িতে। ঘরে বসেই করছেন অপারেশন, যার ফলে অনেকেই হয়েছেন সংক্রমণের শিকার। কেউ কেউ হারিয়েছেন প্রাণ।
কেশবপুরের চাঁদড়া গ্রামের আছিয়া বেগম ছিলেন তেমনই এক ভুক্তভোগী। তার ছেলে আনিচুর রহমান বলেন, “মাকে রশিদা দেখেন এবং বলেন, বড় সমস্যা, অপারেশন করতে হবে। পরে বাড়িতে অপারেশন করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মা মারা যান।”
একজন ভুক্তভোগী জানান, “আমার বাড়িতে এসে পাইলস অপারেশন করেন রশিদা বেগম। কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এরপর থেকে ভালো খাবার খেতে পারি না, শরীরের বাম পাশ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”
সরেজমিনে রশিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের ভেতরেই রোগী দেখা চলছে। খাট ও চেয়ারজুড়ে পড়ে আছে রক্তমাখা তুলা ও গজ। দেয়ালে ঝুলছে সিরিঞ্জ। এক পাশে ওষুধের প্যাকেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
রশিদা বেগম স্বীকার করেছেন, “আমি সার্জারি ডাক্তার না। আমার স্বামী ছিলেন প্যারামেডিকেল ডাক্তার। তার কাছেই কাজ শিখেছি। অপারেশন করেছি, এটা ভুল হয়েছে। তবে অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা খারাপ হলে সেটা আমার দায় না।”
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ একাধিকবার অভিযান চালাতে গেলে রশিদা বেগম বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদেক রাসেল বলেন, “ভুয়া ডাক্তার রশিদাকে ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। প্রতিবারই সে পালিয়ে গেছে। তাকে আটকের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি—এই ধরনের ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
Leave a Reply