ফিলিস্তিন — একটি নাম, একটি ভূমি, একটি আর্তনাদ। ইতিহাসের ধুলোমাখা পৃষ্ঠায় এই অঞ্চলের নাম লেখা আছে রক্তে, শোকগাথায় আর অনবরত প্রতিরোধের কাহিনিতে। আজ থেকে নয়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে ধর্ম, রাজনীতি আর ক্ষমতার এক নিষ্ঠুর খেলা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে — কেন ফিলিস্তিন এত গুরুত্বপূর্ণ? ইজরায়েলের কাছে এই মাটি এত আকর্ষণীয় কী কারণে?
ফিলিস্তিন তথা জেরুজালেম হলো ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের জন্য পবিত্রতম স্থানগুলোর একটি। ইহুদিদের বিশ্বাস, এখানেই অবস্থিত “টেম্পল মাউন্ট”, যেখানে ছিল প্রাচীন ইহুদি মন্দির। মুসলিমদের বিশ্বাস, এখানেই নবী মুহাম্মদ (সা.) মেরাজে গিয়েছিলেন — আল আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান। খ্রিষ্টানদের জন্য এটি যিশুখ্রিষ্টের crucifixion ও পুনরুত্থানের স্থান।
আত্মশুদ্ধির আহ্বান ও অফুরন্ত ফজিলতের দিন
এই ধর্মীয় মূল্যবোধ ইজরায়েলকে আরও আগ্রাসী করে তুলেছে। তারা মনে করে এই ভূমি তাদের “ঈশ্বরপ্রদত্ত” অধিকার। অথচ এই মাটিতেই শত শত বছর ধরে বাস করে আসছে ফিলিস্তিনি মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা, যাদের জীবনে প্রতিদিনের বাস্তবতা হলো ভয়, বোমা, সেনা তল্লাশি, এবং মৃত্যুর ঝুঁকি।
ফিলিস্তিন শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। ভূমধ্যসাগর ঘেঁষে থাকা এই এলাকা ইজরায়েলের জন্য সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ফিলিস্তিনকে দখলে রাখা পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোরও (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র) মৌন সমর্থন পেয়ে থাকে ইজরায়েল।
ইজরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে ইহুদি বসতি গড়ে তুলছে। জাতিসংঘ এই বসতিগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করলেও ইজরায়েল তার নির্মাণ বন্ধ করেনি। বরং সেনাবাহিনী ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন ইহুদি উপশহর তৈরি করছে। এটি একটি ‘ধীর গতির জাতিগত নির্মূল’ (Ethnic Cleansing) — যেখানে লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনিকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া এবং ভূমিকে “সম্পূর্ণ ইহুদি” করে তোলা।
প্রতিদিন ফিলিস্তিনে শিশু, নারী, সাধারণ মানুষ নিহত হচ্ছে। গাজার স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী ক্যাম্পও রেহাই পাচ্ছে না ইজরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি নিরুত্তর। বড় শক্তিগুলো কৌশলগত সুবিধার জন্য ইজরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে।
এক শতাব্দী ধরে যারা শুধু বেঁচে থাকার অধিকার চায়, সেই ফিলিস্তিনিরা আজও মাথা উঁচু করে প্রতিরোধ করে চলেছে। পাথরের সামনে বন্দুক, হুমকির সামনে আত্মত্যাগ — ফিলিস্তিন একটি নাম নয়, একটি প্রতিরোধের প্রতীক।
Leave a Reply