ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মানিকগঞ্জ জেলার এক শান্তিপূর্ণ ও ঐতিহাসিক উপজেলা হলো হরিরামপুর। পদ্মার কোলঘেঁষা এই জনপদ তার ভূপ্রকৃতি, লোকজ সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে এক অনন্য মর্যাদা লাভ করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষিনির্ভর জীবনধারা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে হরিরামপুর আজও বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি বহন করে চলছে।
দীর্ঘদিন অচল সরকারি বাঙলা কলেজের ওয়েবসাইট, শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ
হরিরামপুর উপজেলার মোট আয়তন প্রায় ২৪৫.৪২ বর্গকিলোমিটার। এর উত্তরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে রাজবাড়ী জেলা, পূর্বে দোহার (ঢাকা জেলা) এবং পশ্চিমে ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা অবস্থিত। উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে বিভিন্ন খাল, বিল ও পদ্মা নদীর শাখা প্রশাখা, যা এখানকার জনজীবন ও কৃষির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ আমলে হরিরামপুর ছিল নদী-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। পদ্মার তীরে বসবাসকারী জেলেরা মাছ ধরার পাশাপাশি নদীপথে মালামাল পরিবহন করতেন। এখানকার জমিদার প্রথা, নদী-নির্ভর জীবনযাপন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ হরিরামপুরের অতীতকে বর্ণাঢ্য করে তুলেছে।
একটি প্রাচীন জনপদ হিসেবে হরিরামপুরে বহু পুরাতন মসজিদ, মন্দির, এবং জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ আজও ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে। কথিত আছে, ব্রিটিশ ও পাক আমলে হরিরামপুরের কিছু অঞ্চল ছিল রাজনৈতিক আশ্রয়স্থল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারাও গোপনে আসা-যাওয়া করতেন।
হরিরামপুরের মানুষজন গর্ব করে তাদের ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা গান, পুঁথি পাঠ, এবং পালা গানের কথা বলেন। এখানে বছরের বিশেষ সময়গুলোতে আয়োজিত হয় গ্রাম্য মেলা, যেখানে লোকশিল্পীরা তাদের নিজস্ব শিল্পকর্ম তুলে ধরেন। মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা ও বাঁশের তৈরি সামগ্রী এখানকার লোকজ ঐতিহ্যের অংশ।
ঈদ, পূজা, নবান্ন, বাংলা নববর্ষ—সব উৎসবই এখানে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির আবহে উদযাপিত হয়। হরিরামপুরের পল্লী সংস্কৃতির প্রাণবন্ত রূপ দেখা যায় এইসব উৎসবের সময়।
যদিও হরিরামপুর আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হচ্ছে, তবুও এখানকার মানুষ আজও অনেকাংশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ—বিশেষত নদীভাঙন ও বন্যার শিকার হন। শিক্ষার হার ক্রমশ বাড়লেও এখনও অনেক গ্রামে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বর্তমানে হরিরামপুরে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষত নারী শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে এখানকার তরুণ প্রজন্ম আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
অপকর্ম ঢাকতে আ.লীগপন্থি সেই শিক্ষকের দৌড়ঝাঁপ
হরিরামপুর শুধুই একটি উপজেলা নয়—এটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা, সংগ্রাম, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ধারক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবিক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই জনপদকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের সচেতন প্রয়াস।
Leave a Reply