মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা যেমন দ্রুত এগোচ্ছে, তেমনি ইসরায়েল সরাসরি সামরিক হামলার প্রস্তুতির বার্তা দিয়ে চলেছে।
যমুনায় ভেসে উঠলো অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ
দুই দেশের হুমকি, পাল্টা হুমকি, সামরিক মহড়া এবং ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বাস্তবতা পরিস্থিতিকে সরাসরি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ ধরনের সংঘাত শুরু হলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা কার্যত স্থবির হয়ে গেছে এবং পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কও টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে— ইরান ও ইসরায়েল কীভাবে ধীরে ধীরে সরাসরি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে:
১. ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ
ইরান সম্প্রতি চীন থেকে বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়াম পারক্লোরেট সংগ্রহ করছে, যা কঠিন জ্বালানিভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ উপাদান দিয়ে প্রায় ৮০০ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এই অস্ত্রভাণ্ডার ইরান শুধু নিজস্ব প্রতিরক্ষার জন্য নয়, বরং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের মতো মিত্রদের হাতেও পৌঁছে দিতে পারে।
২. ইসরায়েলের হামলার প্রস্তুতি
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) সম্প্রতি ইরানবিরোধী একাধিক সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এসব মহড়ায় ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সম্ভাব্য আক্রমণের অনুশীলন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইসরায়েল “আত্মরক্ষার অধিকার” সংরক্ষণ করে এবং ইরানকে পরমাণু সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হবে না।
৩. আঞ্চলিক ছায়াযুদ্ধে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ না করলেও সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে পরোক্ষভাবে ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েল সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে, এর জবাবে হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর ইয়াফার দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। রয়টার্স-এর মতে, সিরিয়ায় ইরানপন্থী মিলিশিয়ারা ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে।
৪. নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ চাপ ও রাজনৈতিক কৌশল
ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছেন। বিচার সংস্কার, গাজা যুদ্ধ ও সরকারের বিভিন্ন নীতিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়া এবং সম্ভাব্য সামরিক অভিযান জাতীয় ঐক্য গঠনের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
৫. ইসরায়েলের কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতা বনাম ইরানের জোট গঠন
গাজা যুদ্ধের পর ইসরায়েল ক্রমেই আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ছে। জর্ডান রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে, তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ আলোচনাও থমকে গেছে। বিপরীতে, ইরান চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে আঞ্চলিক জোটে নিজেকে শক্তিশালী করছে।
এখন কী ঘটতে পারে?
ইসরায়েল যখন আগ্রাসী কৌশলে এগোচ্ছে, তখন ইরানও সম্ভাব্য প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে, আগামী সপ্তাহগুলোতে যে কোনো সময় ছোট সংঘর্ষ বড় যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
চিত্রনায়িকা তানিন রহমান সুবহা আর নেই
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে আরেকটি বিস্ফোরক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে— শুধুমাত্র প্রয়োজন একটি ট্রিগার মুহূর্ত।
Leave a Reply