ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে আইন পেশা আজ যে অবস্থানে, তা কোনো হঠাৎ অর্জন নয়। হাজার বছরের বিবর্তনের ফলেই আজকের এই সম্মানজনক পেশার গড়ন। কিন্তু এই পথচলা শুরু হয়েছিল কোথা থেকে? কেমন ছিল প্রাচীন সমাজে আইন ও আইনজীবীর ভূমিকা? ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক আইন পেশার এক বিস্ময়কর অভিযাত্রা।
চার সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন বাবা, ঘটনাস্থলেই নিহত পাঁচজন
আইনের শেকড় গাঁথা মানব সভ্যতার গোড়ার দিকে। মেসোপটেমিয়ার হাম্মুরাবির বিধান (প্রায় ১৭৫৪ খ্রিস্টপূর্ব) ছিল ইতিহাসের প্রথম লিখিত আইন। প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সভ্যতায় আইনজীবী বা “অরেটর” নামের বক্তারা বিচারব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতেন। তবে তারা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না—তাদের দায়িত্ব ছিল ন্যায় প্রতিষ্ঠা।
ইউরোপে মধ্যযুগে চার্চের প্রভাবে বিচারব্যবস্থা ধর্মীয় আকার ধারণ করে। তবে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের বিচার চাওয়ার প্রবণতা বাড়ায় একটি পেশাদার শ্রেণি গড়ে ওঠে, যাঁরা আইনের জ্ঞান নিয়ে অন্যদের সহায়তা করতেন। এ সময় থেকেই ‘ল’ ইয়ার’, ‘সোলিসিটর’ ও ‘ব্যারিস্টার’ শব্দগুলোর প্রচলন শুরু হয়।
বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে আইন পেশার কাঠামো গড়ে ওঠে ইংরেজ শাসনের সময়। ১৭৭৪ সালে কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো পেশাদার আইনজীবীদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯২৩ সালের অ্যাডভোকেটস অ্যাক্ট এবং সর্বশেষ ১৯৬১ সালের অ্যাডভোকেটস অ্যাক্ট (ভারতে) পেশাটিকে আরও গঠনতান্ত্রিক রূপ দেয়।
আজকের বিশ্বে আইনজীবী শুধু আদালতের মেঝেতে সীমাবদ্ধ নন; তারা মানবাধিকার, রাজনীতি, কর্পোরেট জগত, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ডিজিটাল যুগে ‘সাইবার ল’ ও ‘আইটি ল’ নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
বাংলাদেশে আইন পেশা এখন একটি প্রতিযোগিতামূলক এবং প্রভাবশালী ক্ষেত্র। সুপ্রিম কোর্ট ও জেলা আদালতে হাজার হাজার আইনজীবী প্রতিদিন ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন। নারী আইনজীবীর অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে এখনো গ্রামীণ পর্যায়ে আইনের সহজপ্রাপ্যতা, মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা ও আইনি শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
যমুনায় গোসল করতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশু নিখোঁজ,উদ্ধার অভিযান স্থগিত
আইন পেশা শুধুই চাকরি নয়, এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে পেশা ন্যায়, অধিকার ও মানবিকতার পক্ষে লড়েছে, তার ইতিহাস জানাও আমাদের দায়িত্ব। আর এই ইতিহাস থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে আগামী দিনের আইনজীবীদের গড়তে হবে এক ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ।
Leave a Reply