সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি, রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো, কমিশন বাণিজ্য, হুইলচেয়ার ভাড়া নেওয়ার মতো নানা অনিয়ম চলছে প্রকাশ্যেই। এসব কারণে সাধারণ রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এসব চিত্র সামনে আসে।
ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শনে যায়। তারা সরকারি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগে মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ড বয় হরষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, ঈদের পরদিন তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হাসপাতালের স্টোরে গেলে জানানো হয়, ওষুধ সাপ্লাই নেই, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। পরে এক ওয়ার্ড বয় তাকে বলেন, “চাচা, বাইরে থেকে ৮৫০ টাকা দিয়ে যে ওষুধ নিচ্ছেন, আমি সেটা ৫০০ টাকায় দিতে পারি।” তিনি সেখান থেকে ওষুধ কিনেন, যেগুলো পরবর্তীতে মেয়াদোত্তীর্ণ বলে ধরা পড়ে। রোগীর শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার পরই তিনি জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভব করেন ও জ্বরে আক্রান্ত হন।
সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ওয়ার্ড বয় হরষিত স্বীকার করেন, “ছয়-সাত মাস আগে ডাস্টবিন থেকে কয়েকটি ওষুধ কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। এখন সুযোগ বুঝে সেগুলো বিক্রি করেছি।”
তদন্তে দেখা গেছে, হরষিতের কাছ থেকে কেনা ছয়টি ওষুধের মধ্যে দুইটির মেয়াদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে।
তালা উপজেলার জাতপুর এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। সরকারি হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করাতে গেলেও টাকা দিতে হয়। ডাক্তার প্রেসার মাপতে বললেও টাকার কথা বলা হয়।”
আরেক রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলাম জানান, “আমার আম্মু স্ট্রোকের রোগী। জরুরি বিভাগ থেকে তিন তলার মেডিসিন বিভাগে যেতে বলা হয়। হুইলচেয়ারে ওঠানোর পরেই টাকা দাবি করা হয়। পরে প্রেশার ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে গেলেও টাকা দিতে হয়। ডাক্তার আবার প্রেশার মেপে যেতে বললে ওয়ার্ড বয় আমাকে বলে, ‘আপনার আম্মু মারা যাক, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।’ এমন আচরণ কল্পনাতীত।”
আব্দুল গফুর নামে আরেক রোগী জানান, “এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। টয়লেটে নিতে হলেও হুইলচেয়ারের জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়। সরকারি হাসপাতাল হয়েও সবকিছু যেন টাকার বিনিময়ে চলছে।”
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, “আমরা একাধিকবার এসব বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ডাক্তারদের অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু ওষুধ স্টোর থেকে রোগীদের কাছে না গিয়ে কীভাবে ওয়ার্ড বয়ের মাধ্যমে বিক্রি হয়, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরতে খোদা বলেন, “ওষুধ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনারা রোগীর স্বজনকে বলুন যেন একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব এবং দোষী প্রমাণিত হলে তাকে বরখাস্ত করব।”
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চরম অনিয়ম: ওষুধ বাণিজ্য, পরীক্ষা বাবদ ঘুষ, রোগীদের ভোগান্তি চরমে
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি, রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো, কমিশন বাণিজ্য, হুইলচেয়ার ভাড়া নেওয়ার মতো নানা অনিয়ম চলছে প্রকাশ্যেই। এসব কারণে সাধারণ রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এসব চিত্র সামনে আসে।
ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীর একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শনে যায়। তারা সরকারি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগে মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ড বয় হরষিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, ঈদের পরদিন তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হাসপাতালের স্টোরে গেলে জানানো হয়, ওষুধ সাপ্লাই নেই, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। পরে এক ওয়ার্ড বয় তাকে বলেন, “চাচা, বাইরে থেকে ৮৫০ টাকা দিয়ে যে ওষুধ নিচ্ছেন, আমি সেটা ৫০০ টাকায় দিতে পারি।” তিনি সেখান থেকে ওষুধ কিনেন, যেগুলো পরবর্তীতে মেয়াদোত্তীর্ণ বলে ধরা পড়ে। রোগীর শরীরে ইনজেকশন দেওয়ার পরই তিনি জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভব করেন ও জ্বরে আক্রান্ত হন।
সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ওয়ার্ড বয় হরষিত স্বীকার করেন, “ছয়-সাত মাস আগে ডাস্টবিন থেকে কয়েকটি ওষুধ কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। এখন সুযোগ বুঝে সেগুলো বিক্রি করেছি।”
তদন্তে দেখা গেছে, হরষিতের কাছ থেকে কেনা ছয়টি ওষুধের মধ্যে দুইটির মেয়াদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে।
তালা উপজেলার জাতপুর এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। সরকারি হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করাতে গেলেও টাকা দিতে হয়। ডাক্তার প্রেসার মাপতে বললেও টাকার কথা বলা হয়।”
আরেক রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলাম জানান, “আমার আম্মু স্ট্রোকের রোগী। জরুরি বিভাগ থেকে তিন তলার মেডিসিন বিভাগে যেতে বলা হয়। হুইলচেয়ারে ওঠানোর পরেই টাকা দাবি করা হয়। পরে প্রেশার ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে গেলেও টাকা দিতে হয়। ডাক্তার আবার প্রেশার মেপে যেতে বললে ওয়ার্ড বয় আমাকে বলে, ‘আপনার আম্মু মারা যাক, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।’ এমন আচরণ কল্পনাতীত।”
আব্দুল গফুর নামে আরেক রোগী জানান, “এখানে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। টয়লেটে নিতে হলেও হুইলচেয়ারের জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়। সরকারি হাসপাতাল হয়েও সবকিছু যেন টাকার বিনিময়ে চলছে।”
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, “আমরা একাধিকবার এসব বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ডাক্তারদের অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু ওষুধ স্টোর থেকে রোগীদের কাছে না গিয়ে কীভাবে ওয়ার্ড বয়ের মাধ্যমে বিক্রি হয়, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরতে খোদা বলেন, “ওষুধ বিক্রির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনারা রোগীর স্বজনকে বলুন যেন একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। তাহলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব এবং দোষী প্রমাণিত হলে তাকে বরখাস্ত করব।”
Leave a Reply