দীর্ঘদিনের হতাশা, ভাঙা স্বপ্ন আর চাপা কান্নার অধ্যায় শেষে অবশেষে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফরম্যাটে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাল দক্ষিণ আফ্রিকা। ‘চোকার্স’ তকমা ঘুচিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল প্রোটিয়ারা।
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: জাতির উদ্দেশে খামেনির দৃঢ় বার্তা,আসছে ‘চূড়ান্ত জবাব’
লর্ডসের ঐতিহাসিক ময়দানে ফাইনালে তারা ৫ উইকেটে হারিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বে এই জয় শুধু একটি ম্যাচজয় নয়— এটি মুক্তির আনন্দ, প্রতিশোধের রূপকথা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে অ্যান্ড্রু হাডসন আর শন পোলকের কান্না, ২০১৫ সালে ফাফ ডু প্লেসিদের হৃদয়বিদারক বিদায় কিংবা ২০১৯-এর ম্যানচেস্টারের বেদনাও যেন মিলিয়ে গেল এই জয়ের গৌরবে।
ম্যাচের গল্প: পতন, প্রতিশোধ আর পুনরুত্থান
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ছিল অস্ট্রেলিয়া। উসমান খাজা ফিরেন শূন্য রানে। স্টিভ স্মিথ কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও থামেন ৬৬ রানে। কিন্তু প্রোটিয়া পেসারদের সামনে টিকতে পারেনি কেউই। বিশেষ করে ক্যাগিসো রাবাদার দাপটে অজি ইনিংসে ধস নামে— ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। ইয়ানসেন নেন ৩টি। প্রথম ইনিংসে অজিরা গুটিয়ে যায় মাত্র ২১২ রানে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়ারা নিজেরাও ধসে পড়ে প্যাট কামিন্সের আগুনে স্পেলে। মাত্র ২৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইনআপ একাই গুঁড়িয়ে দেন অজি অধিনায়ক। বেডিংহ্যাম (৪৫) ও বাভুমা (৩৬) ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেননি। ১৩৮ রানে থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস, পিছিয়ে পড়ে ৭৪ রানে।
কিন্তু এখানেই গল্পের মোড় ঘুরে যায়।
দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ান প্রোটিয়া বোলাররা। এনগিদি ফেরান স্মিথ ও ওয়েবস্টারকে। রাবাদা ফের আগুন ছড়ান— ফেরান ক্যারি ও লায়নকে। স্টার্কের ৫৮ রানের লড়াকু ইনিংসও দলকে পৌঁছে দিতে পারেনি বড় স্কোরে। ২০৭ রানে অলআউট হয় অজিরা। লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২ রান।
মার্করামের মহাকাব্যিক ইনিংস
চতুর্থ ইনিংসে চাপের মুখে জন্ম নেয় এক মহাকাব্যিক ইনিংস। ওপেনার আইডেন মার্করাম খেলেন ২০৭ বলে ১৩৬ রানের এক অসাধারণ ইনিংস। তাকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক বাভুমা (৬৬)। দু’জনের ১৪৭ রানের জুটিই অস্ট্রেলিয়ার সব কৌশল ভেস্তে দেয়।
শেষদিকে বেডিংহ্যাম ও কাইল ভেরেইনে বাকি কাজ সারেন। ম্যাচ শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে।
জয়ের মুহূর্তে লর্ডসের ব্যালকনি কাঁপে উল্লাসে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে বাভুমার চোখের জল, রাবাদার গর্জন আর মার্করামের অবিশ্বাস্য প্রশান্তি। যে দলটি এক যুগ ধরে ট্রফির স্পর্শটুকুও পায়নি, তারাই আজ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
গাজীপুর-২ আসনে জামায়াতের শোডাউন, নেতৃত্বে প্রার্থী হোসেন আলী
সমাপ্তি নয়, এটি এক নবজাগরণ
এজবাস্টন ১৯৯৯, অকল্যান্ড ২০১৫, ম্যানচেস্টার ২০১৯— প্রতিটি কষ্ট যেন প্রশমিত হলো লর্ডসের সবুজ ঘাসে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই জয় ছিল না হঠাৎ করে পাওয়া সাফল্য। এটি গড়ে উঠেছে বারবার ভেঙে পড়া থেকে উঠে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে।
এই ট্রফি শুধু একটি শিরোপা নয়— এটি একটি দেশের, একটি প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত পরিত্রাণ।
Leave a Reply