আমরা প্রতিদিন নানা কাজ করি, নানা অভ্যাসে জড়িয়ে পড়ি—যেগুলোর অনেকটাই আমাদের অজান্তেই ধীরে ধীরে ক্ষতি করছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, আমাদের মস্তিষ্ককে। বসে বসে থাকা, উচ্চ শব্দে গান শোনা, কিংবা দিনে পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার মতো সাধারণ অভ্যাসগুলোও যে ব্রেইনের জন্য হুমকি হতে পারে, তা আমরা অনেকেই জানি না।
দেশীয়-আন্তর্জাতিক শক্তির জটিল ভূমিকার ইঙ্গিত
সম্প্রতি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক-সহ আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এমনই ১১টি অভ্যাস, যেগুলো ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্কের গঠন, কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
১. ঘুমের অবহেলা:
প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুমের সময়েই মস্তিষ্ক নতুন কোষ তৈরি করে ও বিষাক্ত উপাদান দূর করে। অপর্যাপ্ত ঘুম মানে ধীরে ধীরে ব্রেইনের ক্ষয়।
২. সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া:
রাতভর উপবাসের পর মস্তিষ্ক সচল রাখতে সকালের নাস্তা জরুরি। নিয়মিত নাস্তা না করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে কোষের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
৩. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া:
মস্তিষ্কের ৭৫% অংশই পানি। পানি কম খেলে কোষ সঙ্কুচিত হয়, টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চিন্তা ও স্মৃতি শক্তি হ্রাস পায়।
৪. অতিরিক্ত মানসিক চাপ:
চাপের মধ্যে দীর্ঘসময় কাজ করলে মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ফ্রন্টাল কর্টেক্স সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের চিন্তা ও স্মৃতি।
৫. সব কিছু গুগল করে জানা:
সব কিছু প্রযুক্তির উপর ছেড়ে দেওয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি ও বিশ্লেষণক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজে মনে রাখার চেষ্টা মস্তিষ্কের ব্যায়াম।
৬. হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শোনা:
৩০ মিনিট উচ্চ শব্দে গান শুনলেই শ্রবণশক্তি ও ব্রেইন টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাড়ে আলঝেইমার্স হওয়ার ঝুঁকি।
৭. একা থাকা ও সামাজিক দূরত্ব:
নিয়মিত পরিবার-বন্ধুর সঙ্গে সময় না কাটালে, একাকীত্ব ও বিষণ্নতা জন্ম নেয়। মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
৮. নেতিবাচক চিন্তা ও সঙ্গ:
‘সবই খারাপ’, ‘আমি কিছুই পারি না’—এমন চিন্তা শুধু মন নয়, ব্রেইনের গঠনেও প্রভাব ফেলে। তৈরি হতে পারে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্সের ঝুঁকি।
৯. অন্ধকারে বেশি সময় থাকা:
সূর্যালোকের অভাব মস্তিষ্কের ওপর চাপ ফেলে, ডিপ্রেশন তৈরি করে। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় খোলা আলোতে থাকুন।
১০. অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস:
অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ ও জাঙ্ক ফুড ব্রেইনে কোলেস্টেরল জমিয়ে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। এতে স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
১১. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম:
সারাদিন মোবাইল বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকলে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সে মারাত্মক ক্ষতি হয়। শিশু-কিশোরদের জন্য এটি বিশেষত ভয়াবহ।
বিশেষ ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার্থীদের পরিচয় শনাক্ত
স্মার্টফোন, একঘেয়ে জীবন বা অলসতা যেন আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষয়ের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়—এমন সতর্কতা এখনই নেওয়া জরুরি। মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে চাই ভালো ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, সামাজিকতা, মানসিক প্রশান্তি এবং সবচেয়ে বড় কথা, সচেতনতা।
জীবনটাকে প্রযুক্তির নয়, নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ আপনি যতটা সচেতন, আপনার ব্রেইন ততটাই বুদ্ধিমান।
Leave a Reply