গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর প্রমাণ মুছে ফেলার নানা চেষ্টার পরও দেশের প্রায় প্রতিটি আটক কেন্দ্রে নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ জেরা কক্ষ ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব তারা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
নির্বাচন সামগ্রী ক্রয় সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করবে ইসি:সচিব
কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের সপ্তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, “আমরা যেসব আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, তার প্রায় প্রতিটিতেই নির্যাতনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি জেরা কক্ষ ছিল।”
প্রতিবেদন অনুসারে, সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পিতভাবে প্রমাণ ধ্বংসের পরও নির্যাতনের কিছু আলামত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যা ভুক্তভোগীদের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। যেমন—র্যাব-২ ও সিপিসি-৩ ইউনিটে ঘূর্ণায়মান চেয়ার, র্যাব-৪ ও গোয়েন্দা শাখায় ব্যবহৃত ‘যম টুপি’ এবং টাস্কফোর্স ইন্টাররোগেশন (টিএফআই) সেলে ব্যবহৃত পুলি সিস্টেম—যার মাধ্যমে মানুষকে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হতো।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধ্বংস করা কেন্দ্রগুলোতেও সাউন্ডপ্রুফিংয়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এসব কক্ষ এমনভাবে নির্মিত ছিল যেন নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীর চিৎকার বাইরের কেউ শুনতে না পায়। কিছু কেন্দ্রে উচ্চস্বরে গান বাজানো হতো নির্যাতনের শব্দ চাপা দিতে, যা একইসঙ্গে নির্যাতকদের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভুক্তভোগীরা দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের মধ্যে ছিলেন। তাদের প্রায়ই অর্ধেক পরিমাণ খাবার দেওয়া হতো, চোখ বেঁধে ও হাতকড়া পরিয়ে সম্পূর্ণ একাকী ঘরে আটকে রাখা হতো। এই নির্জনতা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ভুক্তভোগীদের মানসিকভাবে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
প্রতিবেদন উল্লেখ করে, “নির্যাতনের শিকারদের গুম করে রাখা হতো, যাতে আইনি জবাবদিহির ভয় ছাড়াই তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো যায়। তারা কখনো আদালতে পৌঁছাবেন কি না, না কি রাষ্ট্রীয় রেকর্ড থেকেই চিরতরে মুছে যাবেন—এই অনিশ্চয়তা একটি ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা অপরাধীদের নির্ভয়ে নির্যাতন চালাতে উৎসাহিত করত।”
প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়, নির্যাতনকারীরা অনেক সময় প্রমাণ মুছে ফেলতে সচেষ্ট হতো এবং নির্যাতনের দৃশ্যমান ক্ষত সেরে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করত। এরপরই ভুক্তভোগীদের জনসমক্ষে হাজির করা হতো, যাতে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন দৃশ্যমান না থাকে।
নিয়মিত মারধরের পাশাপাশি বিদ্যুৎ শক, যৌনাঙ্গে নির্যাতন, বিশেষ চেয়ারে ঘূর্ণন করে কষ্ট দেওয়া এবং পুরো শরীর ঢেকে নির্যাতন চালানোর যন্ত্রপাতি ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
কমিশনের মতে, এই নির্যাতন ছিল একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও সুসংগঠিত প্রক্রিয়া। যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জনবল প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি দীর্ঘ সময় ধরে চালু রাখা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি আরও জানায়, “এই নির্যাতন প্রক্রিয়া শুধু মাঠপর্যায়ের অনুমোদনেই হয়নি, বরং ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায় থেকেও এর পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। কারণ, এ ধরনের অবকাঠামো গড়া, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন—যা উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা ও অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়।”
মেটাকে অপতথ্য ও ঘৃণাত্মক কনটেন্ট প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রতিবেদনের ভাষায়, “এই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় শুধু সরাসরি জড়িতদের নয়; দায় বর্তায় সেই সব শীর্ষ কর্মকর্তা ও কমান্ডিং অফিসারদের ওপরও, যারা এ কর্মকাণ্ডে অনুমোদন দিয়েছেন বা নীরব সমর্থন জানিয়েছেন।”
Leave a Reply