রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে লেখা ৩৫টি দুর্লভ চিঠির একটি সংকলন সম্প্রতি নিলামে বিক্রি হয়েছে ৫.৯ কোটি টাকায়। ভারতের ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘আস্তাগুরু’ নামক নিলাম সংস্থা গত ২৫ ও ২৬ জুন ‘অনলাইন কালেক্টর্স চয়েস’ শিরোনামে এই বিশেষ নিলামের আয়োজন করে।
ভারতের নতুন বিধিনিষেধ রপ্তানিতে কতটা প্রভাব পড়বে?
চিঠিগুলো লেখা হয়েছিল সমাজবিজ্ঞানী ও সংগীতজ্ঞ ধূর্জটি প্রসাদ মুখার্জিকে, যিনি কবিগুরুর অন্তরঙ্গ বন্ধু ও চিন্তাসঙ্গী ছিলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় ও স্থান থেকে লেখা চিঠিগুলো এতদিন কলকাতাভিত্তিক এক ব্যক্তিগত সংগ্রহে সংরক্ষিত ছিল। এ সংকলনের সঙ্গে রয়েছে আরও ১৪টি খাম, যা এর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
নিলাম কর্তৃপক্ষ জানায়, এই চিঠিগুলো শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং রবীন্দ্রনাথের অন্তর্জগতের গভীর ভাবনার পরিচয় বহন করে। চিঠিগুলোর মাধ্যমে তার সাহিত্যচিন্তা, চিত্রকলা, শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। শান্তিনিকেতন, দার্জিলিং ও পদ্মা নামের তার হাউসবোট থেকে লেখা চিঠিগুলো কবিগুরুর জীবন ও দর্শনের পরিসরকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
একটি চিঠিতে তিনি তার কাব্যগ্রন্থ ‘পুনশ্চ’ ও ‘শেষ সপ্তক’ নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে তিনি লেখেন: ‘নীরবতার ছন্দই কবিতার অংশ।’ আরেক চিঠিতে শিল্পী নন্দলাল বসুর ‘নন্দনতত্ত্ব’ প্রসঙ্গে প্রশংসা করেন রবীন্দ্রনাথ।
নিলাম সংস্থা আরও জানায়, এই সংকলনে থাকা কিছু চিঠি পূর্বে ‘পরিচয়’, ‘সংগীতচিন্তা’ ও ‘ছন্দ’ সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হলেও চারটি চিঠি এবারই প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে এল।
এই নিলামে রবীন্দ্রনাথের তৈরি একটি বিরল ভাস্কর্যও স্থান পায়—১৮৮৩ সালে তৈরি কোয়ার্টজাইট পাথরের ‘দ্য হার্ট’। কবিগুরু এটি নির্মাণ করেছিলেন কর্ণাটকের কারওয়ার ভ্রমণের সময়, যখন তিনি ছিলেন কুড়ির কোঠায়। ধারণা করা হয়, ভাস্কর্যটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন কাদম্বিনী দেবীকে, যিনি তার জীবনে গভীর প্রভাব রেখেছিলেন। পাথরের গায়ে খোদাই করা তার লেখা কবিতাটি ছিল:
‘পাষাণ হৃদয় কেটে
খোদিনু নিজের হাতে
আর কি মুছিবে লেখা
অশ্রু বারিধারা পাতে?’
নিলামে আরও স্থান পায় এম. এফ. হুসেইনের ‘মাদার টেরেসা’ সিরিজের একটি ক্যানভাস, এ. রামচন্দ্রনের ‘রামদেবের স্বপ্ন’—আহল্যার প্রতিকৃতি, এবং নন্দলাল বসুর জলরঙে আঁকা একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এসব চিঠি ও শিল্পকর্ম বর্তমানে ভারতের ‘জাতীয় শিল্প সম্পদ’ হিসেবে চিহ্নিত এবং বিদেশে রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
ভারতের নতুন বিধিনিষেধ রপ্তানিতে কতটা প্রভাব পড়বে?
এই নিলাম শুধু অর্থমূল্যে নয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অনন্য। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন, ভাবনা ও ভারতীয় আধুনিকতার এক অমূল্য দলিলরূপে বিবেচিত হচ্ছে।
Leave a Reply