প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমের আগমনে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র উদ্বেগ। কারণ, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের প্রায় দুই কিলোমিটার রক্ষা বাঁধ এবার চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বর্ষায় বাঁধটির একাধিক স্থানে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, নদীর তলদেশের গভীরতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া এবং তীরের মাটি সরে যাওয়ার কারণে বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, নাওডোবা ইউনিয়নের মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার, পালেরচরসহ চারটি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার বর্তমানে সরাসরি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে তাদের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার এবং কবরস্থান।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ ধসে পড়ে নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালায় এবং দেখা যায়, এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীর গতি বাঁধের একেবারে গা ঘেঁষে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বাঁধের স্থায়িত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।
কারারক্ষীকে হুমকি দিলেন জেলা আ.লীগ নেতা
উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে বিবিএ প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল, যা পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণসামগ্রী সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হতো। তবে দীর্ঘদিনেও এর টেকসই সংস্কার হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ভাঙনের মুখে বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়ে।
বর্তমানে পাউবো ধসে যাওয়া অংশে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ ও নতুন সিসি ব্লক বসানোর কাজ করছে। তবে পুরো বাঁধ এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশে গঠন পরিবর্তিত হয়ে স্রোতের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে রক্ষা বাঁধসহ আশপাশের জনপদ নদীভাঙনের হুমকিতে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জলিল তালুকদার বলেন, “নদী এখন আমাদের দোরগোড়ায়। সরকার যদি একটি মজবুত বাঁধ নির্মাণ করত, তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি রক্ষা পেত।” আরেক ভুক্তভোগী কেয়া আক্তার বলেন, “বাঁধ এখন নদীর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের বাড়িঘর হারাতে হবে।”
পাউবো শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান জানিয়েছেন, “বাঁধটি এক যুগ পুরোনো হওয়ায় বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।”
Leave a Reply