জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে গঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) তদন্ত কমিটি নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তিন সদস্যের এ কমিটির দুজনই বঙ্গবন্ধু পরিষদের সক্রিয় নেতা হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান খান ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী মোর্শেদ কাজেম—যাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
তদন্ত কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুল হাকিমকে আহ্বায়ক হিসেবে। সদস্য করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক শিক্ষা গবেষণা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান খানকে এবং সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন পরিষদের আরেক সদস্য আলী মোর্শেদ কাজেম।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতেই এ কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মানুষ মরে গেলে পচে, বাঁচলে বদলায়—মাহমুদুল ও কাজেম তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সরকার বদল হতেই তারা নতুন মুখোশে হাজির হয়েছেন।”
বিতর্কিত সদস্য মাহমুদুল হাসান খান বলেন, “আমি নিজে থেকে কমিটিতে যেতে বলিনি, প্রশাসন আমাকে রেখেছে।” আর আলী মোর্শেদ কাজেম দাবি করেন, “আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম না, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকই কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন।”
কমিটিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কুবির জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক সাকিব হোসাইন। তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্টদের চিহ্নিত করতে তাদের সহচরদের দিয়ে তদন্ত করানো মানেই প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করা।”
এ বিষয়ে ছাত্রদল ও এনসিপি নেতারাও তীব্র প্রতিবাদ জানান। কুবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, প্রশাসন শুরু থেকেই আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের প্রাধান্য দিয়ে আসছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাফসা আক্তার বলেন, “স্বৈরাচার বিদায় নিলেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো সক্রিয়। কমিটি থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাদের অবিলম্বে সরাতে হবে।”
তবে কুবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “ওই শিক্ষকরা যেহেতু আগে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তারা সহজে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবেন। আইন বিভাগের শিক্ষক রাখা হয়েছে নিয়মতান্ত্রিকতা নিশ্চিতে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “কমিটি গঠনে সিন্ডিকেটের সম্মতি রয়েছে। তবে কেউ আপত্তি করলে পরবর্তী সিন্ডিকেটে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।”
এই কমিটি ঘিরে তুমুল বিতর্ক এখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে কেন্দ্রবিন্দুতে।
Leave a Reply