
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সকালে বরগুনার মিজানুর রহমান প্রতিদিনের মতো স্ত্রী, সন্তান ও অসুস্থ বাবাকে বাসায় রেখে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু কাজ শেষে আর ফেরা হয়নি তার। ঢাকার মানিকনগর বিশ্বরোড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হন এই ঠেলাগাড়িচালক।
পেড্রোর জোড়া গোলে চেলসির ফাইনাল নিশ্চিত
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকার রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। তখন জীবন-জীবিকার টানাপোড়েনে পড়েন মিজানুর ও তার পরিবার। বাইরে আন্দোলনের ঝুঁকি, ঘরে খাবারের টান—তাই বাধ্য হয়েই স্ত্রী শিরিন তাকে কাজে যেতে বলেন।
সেই দিন বিকেলে কাজ শেষে বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মিজানুর। পরে আশপাশে থাকা কয়েকজন তাকে ঢাকা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
রাতেই তার মরদেহ বরগুনার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজনরা এবং পরদিন সকালেই তাকে দাফন করা হয়।
মো. মিজানুর রহমান বরগুনা সদর উপজেলার কালিরতবক এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। বাবা জাকির হোসেন দুলালের বড় ছেলে মিজানুর প্রায় এক দশক আগে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় পাড়ি জমান। যখন যে কাজ পেতেন, সেটিই করতেন। বেশিরভাগ সময়ই বাবার সঙ্গে ঠেলাগাড়ি চালাতেন।
মৃত্যুর পর স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন, নয় বছর বয়সী মেয়ে সামিয়া আক্তার পিংকি, পাঁচ বছরের ছেলে সাজিদুল ইসলাম এবং তার অসুস্থ মা-বাবা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গ্রামের বাড়িতে নিজের কোনো ঘর না থাকায় শিরিন এখন দুই সন্তান নিয়ে দেবরের বাড়িতে আশ্রয়ে আছেন।
শিরিন বলেন,মিজানের মৃত্যুতে আমি এখন পুরোপুরি অসহায়। বাবার বাড়িতে কোনো জায়গা নেই, মা অন্যের বাসায় কাজ করেন, আর বাবা মানসিক রোগী। সরকার যেন অন্তত একটা থাকার জায়গা আর একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।”
মিজানুরের পিতা বলেন,ঘটনার দিন আমার যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শরীর খারাপ থাকায় যাইনি। গেলে হয়তো ছেলেকে বাঁচাতে পারতাম।”
তার ছোট চাচা সরোয়ার জানান,মিজান ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিল। ঢাকায় থেকেও প্রায়ই গ্রামে টাকা পাঠাতো মায়ের জন্য। ঈদেও বসে থাকতো না।”
বরগুনার জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তারা শহীদ মিজানুরের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ,যান চলাচল বন্ধ
বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়াসিন আরাফাত রানা বলেন,
“শহীদ পরিবারের জন্য কর্মসংস্থানসহ আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন সরকারি সেবা ও সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।”
Leave a Reply