২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার ও নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে যেমনভাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, এবারও ঠিক একই কৌশলে গাজার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে স্থায়ীভাবে দখল কায়েমের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলা বিশ্বাসঘাতকতা: ইরান
সম্প্রতি দেশটি গাজা ও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের ঘোষণাও দিয়েছে। ২৯ মে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ভূমিতে নতুন করে ২২টি অবৈধ বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসবের মধ্যে কিছু বসতি ইতোমধ্যেই ‘আউটপোস্ট’ হিসেবে গড়ে উঠেছে, যেগুলো সরকারি অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এবং উগ্রপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই সিদ্ধান্তের নেতৃত্ব দেন। কাটজ বলেন, “এই উদ্যোগ জুডিয়া এবং সামারিয়ায় আমাদের নিয়ন্ত্রণকে আরও দৃঢ় করবে।” বর্তমানে পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ১০০টিরও বেশি অবৈধ বসতি গড়ে তুলেছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ বসতি স্থাপনকারী বসবাস করে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক শাসনের অধীনে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেখানে কিছু এলাকায় সীমিত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে।
ইউরোপের ৯ দেশের ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি অবস্থান নিয়েছে ইউরোপের ৯টি দেশ। রয়টার্সের অনুসন্ধানে পাওয়া এক গোপন চিঠি অনুসারে, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, স্পেন ও সুইডেন—এই নয়টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউরোপীয় কমিশনকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অবৈধ বসতিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরায়েলের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩ সালে ইইউ ও ইসরায়েলের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪২.৬ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তবে এই বাণিজ্যের কতটা অংশ দখলদার বসতিগুলোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) একটি মতামত প্রকাশিত হবে, যেখানে ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও বসতিগুলোর দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হতে পারে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ইইউর উচিত হবে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভোট রয়টার্সকে বলেন, “ইউরোপকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্য নীতিমালা গঠন করতে হবে। বাণিজ্য কখনোই আমাদের নৈতিক ও আইনি দায়বদ্ধতা থেকে আলাদা হতে পারে না।”
২৩ জুন ইইউ বৈঠক
আসন্ন ২৩ জুন ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন হবে। বিশেষ করে, ইইউর সঙ্গে ইসরায়েলের বিদ্যমান চুক্তিগুলোতে মানবাধিকার সংক্রান্ত ধারা মেনে চলা হচ্ছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
ইরানে ইসরায়েলের হামলা, যুদ্ধকালীন ক্ষমতা ছাড়লেন আয়াতুল্লাহ খামেনি
আল জাজিরার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে, ইইউতে অবস্থিত ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশন কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
Leave a Reply