অপরাধবিচার ব্যবস্থায় কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা জোরদারে সরকারের উদ্যোগ
দেশে মিথ্যা মামলা ও অযৌক্তিক গ্রেফতার কমাতে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান আনছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘অ্যাক্সেসিবল অ্যান্ড ইফেক্টিভ ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমস’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তরুণ সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে হবে:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা কিছু বিধান আনছি। এখনই সব খোলাসা করছি না, তবে নিশ্চিত করছি—মিথ্যা মামলা ও অযাচিত গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। এতে অন্তত কিছুটা হলেও সমস্যা কমবে বলে আশা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যা কিছু করি না কেন, একদল মানুষ বলে পুলিশকে আরও ক্ষমতা দেওয়া হোক। আবার যদি কিছু না করি, বলে কিছুই করিনি। তাই আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি।”
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিসি) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।
সংলাপে ইউএনওডিসি’র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপ-প্রতিনিধি ড. সুরুচি প্যান্ট স্বাগত বক্তব্য দেন এবং বাংলাদেশ অফিসের প্রধান ফেলিপে রামোস সংলাপের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।
দ্রুত ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিতে সরকারপ্রধানের আশ্বাস
আইন উপদেষ্টা বলেন, “দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে আমরা একটি কার্যকর ব্যবস্থা চালু করেছি। ছেলে শিশুদের যৌন নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি দিয়েছি। পাশাপাশি গুম সংক্রান্ত একটি নতুন আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।”
তিনি জানান, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। আগে প্রতি জেলায় একজন লিগ্যাল এইড অফিসার থাকতেন, এখন তিনজন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ছোটখাট মামলা যেমন পারিবারিক বিরোধ, পাঁচ লাখ টাকার নিচে চেক ডিজঅনার এবং পিতা-মাতার ভরণপোষণ সংক্রান্ত মামলায় বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা চালু করা হয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার সময় ও খরচ কমাবে বলে তিনি মনে করেন।
২০ হাজার মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রা
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে, যা প্রায় ৩ লাখ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছিল। আগামী ছয় মাসে আরও ২০ হাজার মামলা প্রত্যাহার সম্ভব বলে আশা করছি।”
বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা বাড়াতে বিচারকদের সম্পদ ঘোষণাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং আদালত কর্মী নিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা চালু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনটি গোলটেবিল আলোচনা
সংলাপে তিনটি পৃথক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথমটি ছিল আইনি সহায়তা সহজপ্রাপ্যতা বিষয়ে। এটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার তানিম হুসাইন শাওন। আলোচনায় অংশ নেন ইউএনওডিসি ও ইউএনডিপির আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
দ্বিতীয় গোলটেবিল ছিল পেশাদার ও জবাবদিহিমূলক প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠনের বিষয়ে।
তৃতীয়টি ছিল মানবাধিকারভিত্তিক ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিতে পুলিশ-প্রসিকিউশন সমন্বয় নিয়ে।
প্রতিটি আলোচনায় সরকার, বিচার বিভাগ, বার কাউন্সিল, এনজিও ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিচার সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার দেওয়া বিষয়গুলো এসব আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির গেজেট নিয়ে রিভিউ রায়ের দিন রোববার
আসিফ নজরুল ইউএনওডিসি ও বিআইআইএসএস-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “সরকার কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি দ্রুত, ন্যায্য ও কার্যকর ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।”
Leave a Reply