বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক ও অনিশ্চিত বিশ্বে ব্যক্তি, পরিবার কিংবা রাষ্ট্রের টিকে থাকার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—কীভাবে সম্ভব এই আর্থিক শক্তির অধিকারী হওয়া? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা, পরিকল্পিত আয়ব্যবস্থা, বিনিয়োগ জ্ঞান এবং আত্মনির্ভরতার চর্চাই হতে পারে এ পথের প্রধান চাবিকাঠি।
আর্থিক শক্তি গঠনের প্রথম ধাপ হলো আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে সুষম সম্পর্ক গড়ে তোলা। অর্থনীতিবিদ ড. মাহমুদা খাতুন বলেন, “আমরা অনেকেই আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিই, কিন্তু ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বা সঞ্চয়ের কৌশল জানি না। মাসিক বাজেট তৈরি করা এবং প্রয়োজনহীন খরচ বাদ দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।”
বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রয়োজন দক্ষতা অর্জন। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে শুধু একটিমাত্র পেশায় নির্ভরশীল থাকলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, কিংবা কনটেন্ট ক্রিয়েশন—এ ধরনের স্কিল আয়বর্ধনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে।
ইতিহাসের পাতায় শিবালয়
সরকারি বা প্রথাগত চাকরির বাইরে বেরিয়ে অনেকে ছোটখাটো উদ্যোগের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা রহিমা বেগম জানান, “একসময় অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম। এখন নিজের হাতে বানানো আচার, মশলার অনলাইন ব্যবসা করি। মাসে আয় ২০ হাজার টাকার বেশি।”
বাংলাদেশে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক শিক্ষা এখনও তেমন প্রসার লাভ করেনি। অনেকেই ব্যাংকিং, বিনিয়োগ, শেয়ার মার্কেট, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানেন না, ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পেছনে পড়ে থাকেন। এই ঘাটতি দূর করতে প্রয়োজন স্কুল থেকেই আর্থিক সাক্ষরতা শিক্ষা চালু করা।
অতিরিক্ত অর্থ জমিয়ে রাখার বদলে তা সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। রিয়েল এস্টেট, স্বর্ণ, মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ার মার্কেটে সচেতন বিনিয়োগ হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতির গ্যারান্টি।
দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে নারীশক্তিকে কাজে লাগানো অপরিহার্য। শুধু পরিবার নয়, নারীর আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করলেই সমাজে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে চাইলে দরকার আত্মবিশ্বাস, জ্ঞান এবং সঠিক সিদ্ধান্ত। ছোট ছোট অভ্যাস, পরিকল্পনা ও উদ্যোগই বদলে দিতে পারে ব্যক্তি ও জাতির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।
Leave a Reply