শব্দদূষণ—এক নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অন্যতম বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দূষণ, বিশেষত রাজধানী ঢাকায়। যানজট, নির্মাণকাজ, শিল্পকারখানার শব্দ, মাইক-বাঁশির হুল্লোড়—সব মিলে শব্দদূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে রাজধানী এখন পৃথিবীর সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহরগুলোর তালিকায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির অনুরোধ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের এমনকি অপেক্ষাকৃত ‘নিরব’ অঞ্চলগুলোতেও শব্দের মাত্রা সহনীয় সীমা অতিক্রম করেছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় সমস্যা দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
একসময় রাজধানীতে গড়ে দিনে ১২ ঘণ্টা শব্দের মাত্রা সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে যেত, এখন সেই সময়সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ ঘণ্টারও বেশি। অথচ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, ঢাকার জন্য দিনের বেলায় শব্দের আদর্শ মান সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল।
গবেষণার ভয়াবহ চিত্র
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (CAPS) চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কেই শব্দের মাত্রা সহনীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকা দক্ষিণে শব্দের গড় মাত্রা ৭৬.৮০ ডেসিবেল। সর্বোচ্চ মাত্রার শব্দদূষণ হয়েছে নিউমার্কেট মোড় (১০০.৬৫ ডেসিবেল), নয়া পল্টন মোড় (৯২.২২ ডেসিবেল) এবং প্রেসক্লাব মোড় (৯০.০৩ ডেসিবেল)। comparatively কম শব্দ পাওয়া গেছে আবুল হোটেল মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় ও জিরো পয়েন্ট মোড়ে, যেখানে মাত্রা ৭৭-৭৮ ডেসিবেল।
ঢাকা উত্তরে গড় মাত্রা আরও বেশি—৮০.৫৬ ডেসিবেল। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শিয়া মসজিদ মোড় ও মাসকট প্লাজা মোড়ে শব্দের মাত্রা পৌঁছেছে ৯৯.৭৭, ৯৩.০৫ এবং ৯০.২৭ ডেসিবেল পর্যন্ত।
মূল কারণ: মানুষের অবহেলা
শব্দদূষণের প্রধান উৎস যানবাহন—বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, রিকশা ও অন্যান্য ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের হর্নের শব্দ। এছাড়া নির্মাণস্থলে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতির আওয়াজ, কল-কারখানার গর্জন, রাজনৈতিক সভা-মিছিল, বিয়ে কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে মাইক বা বাদ্যযন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
শুধু মানুষের তৈরি শব্দ নয়, প্রাকৃতিক কারণেও শব্দদূষণ ঘটে থাকে—বজ্রপাত, মেঘের গর্জন কিংবা ভূমিকম্প থেকেও সৃষ্টি হয় বিকট শব্দ।
ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি
শব্দদূষণ শুধু বিরক্তিকর নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক—উভয় দিক থেকেই বিপজ্জনক। মানুষের শ্রবণক্ষমতা গড়ে ১-৭৫ ডেসিবেল হলেও তার চেয়ে বেশি শব্দে কানের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, এমনকি বধিরতাও দেখা দিতে পারে। শিশুদের জন্য এই দূষণ আরও বিপজ্জনক—তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
স্নায়ুতন্ত্রে চাপ, মনোযোগ হ্রাস, ঘুমের সমস্যা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং মেজাজ খিটখিটে হওয়া—এসব শব্দদূষণের সরাসরি প্রভাব।
সমাধানের পথ
আইন থাকা সত্ত্বেও প্রয়োগের অভাব, সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাব শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণকে করেছে দুরূহ। জনসচেতনতার অভাবও এ সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ছাত্র নেত্রী বর্ষার ওপর হামলা,গ্রেপ্তারকালে পুলিশের ওপরও হামলা
তবে এখনই যদি আমরা কার্যকর উদ্যোগ নেই—সচেতনতা তৈরি, বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার করি—তাহলে শব্দদূষণ হ্রাস করে একটি বাসযোগ্য, সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ নগর গড়া সম্ভব।
একটি শব্দহীন সুন্দর পৃথিবীর জন্য এখনই আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি মানুষের ভূমিকাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
Leave a Reply