ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে স্নাতক শেষ করে ঢাকায় চাকরি করতেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৪)। মাস শেষে ভালো বেতন পেলেও চাকরির নিয়মিত জীবন তাঁর পছন্দ হয়নি। তাই স্থায়ী চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এখন তিনি একজন সফল কাঁকড়া খামারি ও রপ্তানিকারক।
৯ মাসে ৯৯৪ কোটি টাকা আদায় এনবিআরের
কেশবপুরের ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের এই তরুণ উদ্যোক্তার খামার গড়ে উঠেছে সাগরদাঁড়িতে কপোতাক্ষ নদের তীরে। ‘অ্যাকুয়া ক্র্যাব’ নামের খামারে বাগদা, গলদা ও ভেনামি চিংড়ির পাশাপাশি ইউরোপীয় কায়দায় চাষ হচ্ছে কাঁকড়া। এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত তাঁর বিনিয়োগ দুই কোটি টাকার মতো। এরই মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ফিরে পেয়েছেন এবং গত বছর খামার থেকে ২০ লাখ টাকার লাভও করেছেন।
চাষে আসার গল্পটিও আকর্ষণীয়। চাকরি ছেড়ে কুমিল্লায় এক বন্ধুর সঙ্গে চিংড়ি চাষ শুরু করেছিলেন মামুন। একদিন জালে ধরা পড়ে দুটি কাঁকড়া। বাজারে বিক্রি করে দেখেন, এর লাভ চিংড়ির চেয়েও বেশি। সেখান থেকেই শুরু হয় ভাবনা—কাঁকড়া চাষেই সম্ভাবনা।
পরে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের একটি উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন মামুন। পুরস্কার হিসেবে পান ২৩ লাখ টাকা, যা হয় তাঁর ব্যবসার মূল পুঁজি। লবণাক্ত পানিতে কাঁকড়া ভালো বেড়ে ওঠে—এই বিষয়টি মাথায় রেখে কপোতাক্ষ নদঘেঁষা পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন চাষ। ইউরোপের (বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসের) কাঁকড়া চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেন তিনি, যা তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) থেকে শিখেছেন।
বর্তমানে তাঁর খামারে রয়েছে ৭৩ হাজার বক্স, প্রতিটিতে একটি করে কাঁকড়া।
এই কাঁকড়াগুলো রপ্তানি হয় অস্ট্রেলিয়ায়। রপ্তানির জন্য কাঁকড়াগুলোকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রথমে বক্স থেকে তুলে নরম খোলসের কাঁকড়াগুলো মিঠাপানিতে রাখা হয় লবণাক্ততা দূর করতে। এরপর ৪০ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। পরবর্তী ধাপে মিঠা পানিতে ধোয়া, গ্যাস দেওয়া, ক্লোরিন দ্রবণে ডুবানো এবং বরফজলে (আইসবাথ) রেখে প্যাকেটজাত করা হয়। এসব প্যাকেট পাঠানো হয় সাতক্ষীরার মৌতলা এলাকায়, সেখান থেকে বায়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয় অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
স্টার রেটিং থেকে ইনভার্টার প্রযুক্তি—যা খেয়াল রাখা জরুরি
কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, “আমি প্রকল্পটি সরেজমিনে দেখেছি। এটি অত্যন্ত লাভজনক এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। অনেকেই এই প্রকল্প দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।”
Leave a Reply