বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যাঁরা নতুন রাষ্ট্র নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর ৪৪ বছর পরও তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও জনপ্রিয়তা যেমন আছে, তেমনি আছে অস্বীকারযোগ্য অবদান ও এক গভীর প্রভাব, যা এখনও বাংলাদেশ রাজনীতিতে অনুভূত হয়।
বিসিবি পরিচালকের পদ বাতিল,ক্রিকেট অঙ্গনে তোলপাড়
জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে এক বিশেষ পরিচয়ে আবির্ভূত হন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক প্রভাব ফেলেন।
স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান, পরে প্রধান হন। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং একাধিক সামরিক অভ্যুত্থানের পটভূমিতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন।
১৯৭৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবদান চারটি প্রধান খাতে লক্ষণীয়:
রাজনৈতিক প্লুরালিজম প্রতিষ্ঠা:
তিনি একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে বহুদলীয় রাজনীতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের স্বাধীনতা ও নির্বাচনের আয়োজন করে গণতন্ত্রের পথ খুলে দেন।
আর্থ-সামাজিক সংস্কার:
‘গ্রাম সরকার’ প্রবর্তন করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু করেন।
ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও কৃষি পুনর্জাগরণে গুরুত্ব দেন।
রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
‘উৎপাদন বাড়াও’ ও ‘গ্রামকে শহরে রূপান্তর করো’— এই দুটি স্লোগানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
পররাষ্ট্রনীতি:
‘বন্ধুত্ব সবার সঙ্গে, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ নীতি গ্রহণ করেন।
মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপনে কাজ করেন, যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে গঠিত হয় সার্ক (SAARC)।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাত:
সেনাবাহিনী পুনর্গঠন ও আধুনিকায়ন, বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ও পুলিশ বাহিনীতে দক্ষতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেন।
জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল মূলত তাঁর কর্মনিষ্ঠা, শৃঙ্খলা এবং নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে।
তাঁর নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা লাভ করে এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফিরে আসে—এই মূল্যায়ন অনেক বিশ্লেষকই দিয়ে থাকেন।
২০২৫ সালে শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে (২৬ মে – ২ জুন)। এর মধ্যে রয়েছে:
সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
আলোচনা সভা
মসজিদে মসজিদে গণদোয়া
দুস্থদের মাঝে চাল-ডাল ও বস্ত্র বিতরণ
পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ
এই আয়োজন শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে: বিএনপি তাদের প্রতিষ্ঠাতার আদর্শ ও স্মৃতিকে সামনে রেখে এখনও নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করতে চায়।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের আদর্শিক উত্তরাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হলেও অস্বীকার করা যায় না—তাঁর ভাবনাগুলো এখনো বিএনপির নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বারবার তাঁকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দেয়, অন্যদিকে বিএনপি তাঁকে দেশের ‘গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে তুলে ধরে।
টঙ্গীতে ঝুট ব্যবসা কেন্দ্র করে ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেপ্তার ১
শহীদ জিয়াউর রহমান এক জটিল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব—যাঁর সম্পর্কে এককথায় মূল্যায়ন সম্ভব নয়। তবে ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে অস্থির সময়ে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দেশকে একটি কার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
তাঁর শাহাদাতবার্ষিকী শুধু স্মরণ নয়, বরং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও নেতৃত্ব চর্চার ক্ষেত্রেও এক তাৎপর্যপূর্ণ উপলক্ষ।
Leave a Reply