সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আদালতে রিমান্ড শুনানিতে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীর উদ্দেশে বলেন, “জাস্টিফাই করতে না দিলে রিভলভার দিয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।” নিজেকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ না দেওয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সরকারি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি শেষে হাবিবুল আউয়ালের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের পর হাবিবুল আউয়াল আদালতকে বলেন, “মাননীয় আদালত, আপনি ন্যায়বিচার করবেন। আমি স্বীকার করছি, রাজনৈতিক দলের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। দলীয় সরকারের অধীনে সব নির্বাচনই বিতর্কিত। তুলনামূলকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় ৭৩ সালের নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পেলেও সেই নির্বাচনও বিতর্কিত ছিল। মানুষকে পথে আটকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতার লোভ এমন ছিল যে শেখ মুজিবও তা সামাল দিতে পারেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল, কিন্তু পরে নিজেরাই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান পরিবর্তন করে। মৌলিক সংস্কার না হলে এক হাজার বছরেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
বিচারক তখন হাবিবুলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে তিনি সংবিধানের শপথ নিয়েছিলেন, এবং প্রশ্ন করেন, “আপনি কি মনে করেন না, নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছিল?” জবাবে হাবিবুল বলেন, “আমি মনে করি নির্বাচন প্রহসনের ছিল, তবে এতে আমার ব্যক্তিগত কোনো দোষ নেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনই ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করাটা কঠিন।”
বিচারক ফের প্রশ্ন করেন, “তাহলে আপনি পদত্যাগ করেননি কেন?” জবাবে হাবিবুল বলেন, “ওই সময় পদত্যাগের সুযোগ ছিল না।”
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে হাবিবুল বলেন, “ভোটের আগের রাতে যখন ভোট হয়, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। পরে দুইদিন পর জানতে পারি রাতে ভোট হয়ে গেছে। আমি কিছুই জানতাম না।”
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী তখন বলেন, “নিজেকে সাধু প্রমাণ করতে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। অন্যরা কী করেছে সেটা মুখ্য নয়, আপনি কী করেছেন সেটা বলুন।”
তিনি আরও বলেন, “আসামি যদি এভাবে দীর্ঘ বক্তব্য দেয়, তাহলে অন্য আসামিরা কিভাবে নিজেদের পক্ষে কথা বলবে? জাস্টিফাই করার সুযোগ এখানে নেই।” তখন হাবিবুল বলেন, “জাস্টিফাই করতে না দিলে একটা রিভলভার দিয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।”
এই মন্তব্যে এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। পরে বিচারক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে শুনানি শেষ করেন এবং তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চলতি বছরের সফল হজ ব্যবস্থাপনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন প্রধান উপদেষ্টার
উল্লেখ্য, এর আগে ২৩ জুন সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
Leave a Reply