কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে বিলুপ্ত করা হয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। গভীর রাতে জারি হওয়া এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় অন্ধকারে রেখেই ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করে পুরনো প্রতিষ্ঠান দুটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার (১২ মে) সন্ধ্যায় এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাস্টমস ও ট্যাক্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ভবনের বাইরে গিয়ে আন্দোলনের ডাক দেন। মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে এনবিআর ভবনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে অবস্থান ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে বিসিএস (আয়কর ও কাস্টমস) ক্যাডারের কর্মকর্তা, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা অংশ নেবেন।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে এনবিআর, কর অঞ্চল, কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টম হাউসসহ বিভিন্ন দফতরের হাজারো কর্মকর্তা এনবিআর ভবনে জড়ো হন। দীর্ঘ প্রায় ৯ ঘণ্টার বৈঠক শেষে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, অংশীজনদের মতামত ছাড়াই ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’-এর খসড়া পাস করা হয়েছে, যা অগণতান্ত্রিক ও অস্বচ্ছ। অধ্যাদেশে কী রয়েছে, তা জনসম্মুখে প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
এর আগে সম্ভাব্য বিলুপ্তির বিষয়টি আঁচ করে দুই প্রধান সংগঠন বিশেষ জরুরি সভা (ইজিএম) আহ্বান করে। সভা থেকে অবিলম্বে খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল ও এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনও।
এদিকে, এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। লক্ষ্য অর্জনে বাকি তিন মাসে প্রতিদিন ২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা করে রাজস্ব আদায় করতে হবে। এই সময়ে কর্মবিরতি শুরু হলে রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আন্দোলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মবিরতির ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
Leave a Reply