আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। ঢাকাসহ সারা দেশে ধর্মীয় উৎসবের আবহে মহাসমারোহে চলছে গরু কোরবানি। তবে ৮০-১০০ বছর আগেও বাংলার মুসলমানদের জন্য গরু কোরবানি ছিল সহজসাধ্য নয়। তখন কোরবানির প্রশ্নে নানা প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক চাপ এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অভাবে মুসলমানদের ছাগল বা খাসি কোরবানির পথ বেছে নিতে হতো।
যাত্রীর চাপে লোড-আনলোড ব্যাহত,যানবাহনের দীর্ঘ সারি,চরম ভোগান্তি
ঐতিহাসিক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তাঁর ‘বাংলাদেশের উৎসব’ বইয়ে লিখেছেন, “আজ আমরা অনায়াসে গরু কিনে কোরবানি দিই। কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগেও এটি ছিল কঠিন কাজ। দীর্ঘদিন বিতর্কের মধ্য দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা এ অধিকার আদায় করেছেন।”
তিনি উল্লেখ করেন, একসময় হিন্দু জমিদারদের প্রভাবশালী অঞ্চলে গরু কোরবানি নিষিদ্ধ ছিল। অর্থনৈতিক দারিদ্র্যও ছিল একটি বড় বাধা। অধিকাংশ মানুষের পক্ষে একটি গরু কেনা তখন ছিল কল্পনার বাইরে।
ঈদের ছায়ায় দীর্ঘশ্বাস
মুঘল আমলেও এই অঞ্চলে গরু কোরবানি খুব একটা প্রচলিত ছিল না। সম্রাট আকবরের সময় ‘দীনে-ই এলাহী’ প্রচলনের পর আবুল ফজলসহ দরবারের অনেকে গরু জবাই নিষেধ করার পরামর্শ দেন, কারণ ৯৫ শতাংশ মানুষ তখন ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাদের ধর্মীয় অনুভূতি বিবেচনায় রেখে মুসলিমদের গরু কোরবানিতে নিরুৎসাহিত করা হতো।
১৯৪০ দশকে পাটচাষের সুবাদে কিছু টাকাপয়সা হাতে এলে কিছু এলাকায় ধনী মুসলমানদের মধ্যে গরু কোরবানির চল শুরু হয়। দেশ বিভাগের পর (১৯৪৭) গরু কোরবানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বা সামাজিক বাধা অনেকটাই দূর হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে কোরবানির ঈদে গরুর উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
দেশের শান্তি ও মঙ্গলের জন্য দোয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূসের
স্বাধীন বাংলাদেশে আর্থিক উন্নতি, ভাগে কোরবানি দেওয়ার প্রচলন, এবং নতুন নতুন পশুর হাট বসার ফলে গরু কোরবানি আজ ঈদুল আজহার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। লোকমুখে এসব হাট ‘গরুর হাট’ নামেই পরিচিত।
আজকের প্রজন্মের কাছে যেটা আনন্দের সহজ বাস্তবতা, সেটা কিন্তু তাদের পূর্বসূরিদের দীর্ঘ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় লড়াইয়ের ফসল।
Leave a Reply