চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনা আরও নির্বিঘ্ন করতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
ইউরোপে বিরলের ব্যানানা জাতের আম রপ্তানি শুরু
বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে আগামী বছরের হজের জন্য রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে জানিয়ে এ উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “এ বছর ছোটখাটো কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
ধর্ম উপদেষ্টা এএফএম খালিদ হোসেন জানান, ২০২৬ সালের হজ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগামী ১০ জুলাই হজ কোটা প্রকাশ করা হবে।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো বড় অভিযোগ আসেনি, বরং প্রশংসা পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন—তাদের সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।”
তিনি আরও বলেন, “নিবন্ধিত সব হজযাত্রী হজ পালন করতে পেরেছেন—এটি একটি দৃষ্টান্ত। এটি যেন ভবিষ্যতে মন্ত্রণালয়ের একটি স্থায়ী নীতিতে পরিণত হয়।”
হজযাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “সবাই যেন নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারেন, তার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।”
ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, সৌদি আরবের সময়সূচি ও রোডম্যাপ অনুযায়ী হজ ২০২৬-এর জন্য বিস্তারিত ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে। নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হজযাত্রীদের মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জন অথবা নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালের পরিচালক দিতে পারবেন।
২০২৬ সালের হজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো হলো:
১০ জুলাই ২০২৫: হজ কোটা ঘোষণা
২১ অক্টোবর ২০২৫: চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন
১ ডিসেম্বর ২০২৫: সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি
৪ জানুয়ারি ২০২৬: ভেন্ডর ও কোটেশন অনুমোদন
২০ মার্চ ২০২৬: ভিসা প্রদান শুরু
১৮ এপ্রিল ২০২৬: ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু
২৯ মে ২০২৬: সেবা যাচাইকরণ (টেস্ট রান)
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছর মোট ৮৭,১০০ জন বাংলাদেশি হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপে ৩০,২৩৪ জন হজযাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং অ্যাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন।
হজ পালনকালে ৩৮ জন হাজির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং বর্তমানে ২৪ জন সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৫১,৬১৫ জন হাজি।
এছাড়া, হজ চলাকালে ৮০৬টি লাগেজ হারানোর তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৭৯০টি উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি ১৬টি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
পরপর তিন বছর হাজি পাঠাতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। হজ এজেন্সিগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়নে হজযাত্রীদের সন্তুষ্টি, চুক্তি পরিপালন এবং সরকারি নীতিমালা অনুসরণ—এই সূচকগুলো ব্যবহার করে এজেন্সিগুলোকে এ প্লাস, এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।
এ প্লাস ক্যাটাগরিতে থাকা এজেন্সিগুলোকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অভিনন্দনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন প্রফেসর ইউনূস।
সরকারি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
এছাড়া, আগামী বছর যারা হজ করতে আগ্রহী, তারা যেন ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ ব্যবহার করে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি। একই সঙ্গে ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের জন্যও অ্যাপটিকে তথ্যসেবার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা।
Leave a Reply