দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় আট দশক পর প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন করল জার্মানি। চলতি সপ্তাহে দেশটির একটি সশস্ত্র ব্রিগেড পৌঁছেছে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ। খবর এনবিসি নিউজ।
ভিলনিয়াসে আয়োজিত এক সামরিক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে মোতায়েনের ঘোষণা দেন চ্যান্সেলর মার্জ। তিনি বলেন, “আমাদের বাল্টিক মিত্রদের নিরাপত্তা মানেই আমাদের নিরাপত্তা।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপজুড়ে বাড়তে থাকা নিরাপত্তা
উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে জার্মানির এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
ইতোমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছর পেরিয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার ভূখণ্ডবিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় নেতারা।
চ্যান্সেলর মার্জ বলেন, “রাশিয়া শুধু ইউক্রেন নয়, বরং পুরো ইউরোপকেই নতুনভাবে গঠনের চেষ্টা করছে।”
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেডা সতর্ক করে বলেন, “রাশিয়া ও বেলারুশ ইতোমধ্যে আমাদের সীমান্তে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এটি কেবল কৌশল নয়, বরং একটি স্পষ্ট বার্তা।”
যুবদল কর্মী সেলিম সরদারের উপর হামলার প্রতিবাদে শিবালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান সংবিধানে সেনাবাহিনীকে মূলত প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকায় রাখার কথা বলা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে জার্মানির সামরিক নীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
নতুন মোতায়েনকৃত ব্রিগেডটি অবস্থান করবে লিথুয়ানিয়ার রুডনিনকাই শহরে। এটি ২০২৭ সালের মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করবে। এতে প্রায় ৪,৮০০ সেনা, কয়েক শত বেসামরিক কর্মী, প্রায় ২,০০০ সামরিক যান এবং সাঁজোয়া ইউনিট থাকবে।
চ্যান্সেলর মার্জ আরও বলেন, “যদি কেউ ন্যাটোর কোনো সদস্যকে হুমকি দেয়, তাহলে জানিয়ে দিচ্ছি—সম্পূর্ণ জোট একত্রে তার জবাব দেবে।”
এদিকে, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়ুস শনিবার এক সাক্ষাৎকারে জানান, যদি পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া না যায়, তাহলে ২০২৬ সাল থেকে বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগ পুনর্বহালের কথা বিবেচনা করছে সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে জার্মানি বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ বাতিল করেছিল। তবে বর্তমান জোট সরকার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেই নীতিতে পরিবর্তন আনতে চায়। যদিও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি ঐতিহাসিকভাবে স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিক পদ্ধতির পক্ষে ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা কমে যেতে পারে—এই সম্ভাবনার মধ্যেই জার্মানির এই উদ্যোগ এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিতে হবে বলে বারবার জানিয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে, ন্যাটোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো—লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়াকে—রাশিয়া ও বেলারুশের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ করিডোর ‘সুওয়াকি গ্যাপ’-এর মাধ্যমে ন্যাটো মেইনল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রাখাকে এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছে জার্মানি ও জোটের অন্যান্য সদস্যরা।
Leave a Reply