মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মন্তব্যকে তিনি ‘অপরিপক্ব’ বলেও উল্লেখ করেন।
শুক্রবার (২ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, “মানবিক করিডোর স্থাপন বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে তা জাতিসংঘের উদ্যোগ ও তত্ত্বাবধানে হবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে।”
শফিকুল আলম আরও বলেন, “রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে, সেখানে রয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। মানবিক সহায়তার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করা হবে।”
বিয়ে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে, কী বলছেন বনি সেনগুপ্ত?
চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিতে হলে বন্দরের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বন্দর পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। যেসব কোম্পানির ৭০ থেকে ৯০টি বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরকেই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বছরে ১২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেল হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টিইইউএস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় চুক্তি হতে পারে ওপেন টেন্ডার কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের জিটুজি ভিত্তিতে, তবে রেপুটেশনবিহীন কোনো কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন, “বন্দরের দক্ষতা বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে তা বড় ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে ইনল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট সংযোগব্যবস্থাও সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় উন্নত করা হবে।”
শফিকুল আলম জানান, শুধু চট্টগ্রাম নয়, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকাতেও প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ বিদেশি অপারেটর ও বিনিয়োগকারী নিয়োগ দেওয়া হবে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “গত কয়েক মাসে এক লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে— এই তথ্য বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাখাইনে সংঘাত শুরু হলে সেই সময় থেকেই অনুপ্রবেশ শুরু হয়। এমনকি তখন মিয়ানমারের সেনাসদস্যরাও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।”
তিনি আরও জানান, “প্রথম দফায় এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছে। তবে মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, তালিকায় কিছু তথ্যগত সমস্যা রয়েছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে আগামী নির্বাচন নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ এবং সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান।
Leave a Reply