মধ্যপ্রাচ্যে আবারও ছড়িয়ে পড়েছে অস্থিরতা ও উত্তেজনা। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার পুরনো বৈরিতা এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাম্প্রতিক হামলা, পাল্টা প্রতিক্রিয়া এবং কূটনৈতিক হুঁশিয়ারি পরিস্থিতিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যেখানে সরাসরি যুদ্ধ আর কল্পনা নয়—বাস্তবতার সম্ভাব্য পরিণতি।
আমের মিষ্টি স্বাদেই লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য:দিনে কতটুকু আম খাওয়া নিরাপদ?
আজ ২২ জুন সকালে, স্থানীয় সময় আনুমানিক ৬টায় ইসরায়েলের তেল আবিব শহরের উপকণ্ঠে একটি সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে, এটি ইরানের পাঠানো ড্রোন হামলা ছিল। এর জবাবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েল সিরিয়ার একটি ইরানি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (IRGC) ছয় সদস্য নিহত হন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন“আমরা শান্তি চাই, তবে দুর্বলতা নয়। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে, কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”
তেহরানে জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিজবুল্লাহ ও ইরাকি মিলিশিয়াদের সঙ্গে সমন্বয়ের কথাও আলোচনায় এসেছে।
ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছেন“ইরান আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা আত্মরক্ষার্থে প্রস্তুত।”
তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে। এদিকে IDF জানায়, গাজা, সিরিয়া ও লেবানন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘটনার জেরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্ক ও পাকিস্তান কূটনৈতিক সমাধানেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
লেবাননের সংবাদমাধ্যমের দাবি, হিজবুল্লাহ সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি বাড়িয়েছে। গাজা থেকেও ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপের চেষ্টা হয়, তবে ‘আয়রন ডোম’ তা প্রতিহত করে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন“এই সংঘর্ষ থামানো না গেলে তা একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও যুদ্ধ বিস্তারের বিরুদ্ধে। চীন ও রাশিয়া সংঘর্ষ থামানোর আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলকে ‘উসকানিমূলক আচরণ’ পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল বিরোধ নতুন নয়। গত দশকে সিরিয়া গৃহযুদ্ধ, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং হামাস-হিজবুল্লাহকে ইরানের সমর্থন—সব মিলিয়ে দ্বন্দ্বের গভীরতা বাড়তে থাকে।
২০২৪ সালের গাজা অভিযানে ইরানপন্থী গোষ্ঠীগুলো বিপর্যস্ত হলে ইরান সরাসরি সামরিক সমন্বয়ে যায়। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলার অভিযোগ করে আসছে—আজকের ঘটনা সেই উত্তেজনার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই সংঘর্ষ বন্ধ না হলে এটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। দুই দেশের সামরিক শক্তি এবং জোটগুলোর জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা গোটা অঞ্চলকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতিও ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তেলের দাম বেড়েছে ব্যারেল প্রতি ১২ ডলার এবং বিশ্ব শেয়ারবাজারে পতনের সূচনা হয়েছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘর্ষ আর কেবল দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়—এটি এখন বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। দ্রুত, নিরপেক্ষ এবং কার্যকর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
হামলার আগে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা অবহিত ছিলেন না
পরবর্তী কয়েক দিনই নির্ধারণ করবে, মধ্যপ্রাচ্য এক দীর্ঘ যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে কিনা।
Leave a Reply