ভেদরগঞ্জের ছেলের সাফল্যে গর্বিত শরীয়তপুরবাসী
ভালোবাসা, সংগ্রাম আর স্বপ্নের আরেক নাম—উল্লাস পাল। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও জীবনযুদ্ধে থেমে থাকেননি তিনি। বরং প্রতিটি ব্যথা আর প্রতিকূলতাকে শক্তিতে পরিণত করে পৌঁছে গেছেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে—বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে।
সিন্ধু চুক্তি কার্যকর করতে ভারতকে আহ্বান পাকিস্তানের
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের কার্তিকপুর গ্রামের ছেলে উল্লাস পাল। বাবা উত্তম কুমার পাল একজন মৃৎশিল্পী, মা আন্না রানী পাল গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জন্ম থেকেই তার দুই হাত-পা বাঁকা ছিল, স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শেখেননি। বাবা-মায়ের নিরলস চেষ্টায় ভারতে চিকিৎসা করানো হয়। একটি পায়ের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি হাঁটার উপযোগী হলেও তা ছিল কষ্টসাধ্য।
প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী করেই শুরু হয় উল্লাসের শিক্ষাযাত্রা। ১৯৯৯ সালে ভর্তি হন কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্ষায় কাদায় মাখামাখি পথে স্কুলে যেতেন বাবার কোলে চড়ে। বাঁ হাত দিয়েই লেখালেখি শিখেছেন। খেলাধুলায় অংশ নিতে না পারলেও খেলোয়াড়দের প্রতি ছিল তার বিশেষ আগ্রহ।
২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, এরপর ঢাকা নর্দান কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ), যেখানে থেকে তিনি ২০১৬ সালে বিবিএ এবং পরবর্তীতে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে তিনি শুরু করেন কঠোর প্রস্তুতি। ৪০তম, ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসে অংশ নেন। ৪০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও কোনো পদ পাননি। ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হন জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে যোগ দেন নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে। তবে মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়া। সেই স্বপ্ন পূর্ণতা পায় ৪৪তম বিসিএসে, যেখানে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
উল্লাস পাল বলেন,
“যখন নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রশাসন ক্যাডারে দেখে নিশ্চিত হলাম, চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। অনেকেই আমাকে বলেছে, ‘তুমি পারবে না’। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। আমার স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়া—আজ সেটা সত্যি হলো।”
তার এই সাফল্যে খুশি শিক্ষক, বন্ধু ও প্রতিবেশীরাও।
কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন,
“শারীরিকভাবে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও ওর মেধা ছিল অসাধারণ। উল্লাসের এই সাফল্যে আমরা সবাই গর্বিত।”
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সাময়িক বরখাস্ত
উল্লাস পালের এই অর্জন শুধু ব্যক্তিগত নয়—এটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণ-তরুণীর জন্য, যারা কোনো না কোনো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ছে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য।
Leave a Reply