দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামের এক অদম্য তরুণ মোস্তাফিজুর রহমান। প্রতিকূল বাস্তবতার পাহাড় ডিঙিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন দেশের পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ার স্বপ্ন তার দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ থমকে আছে অর্থনৈতিক অভাব-অনটনের কাছে।
মোস্তাফিজের বাবা খোরশেদ আলম একজন দিনমজুর। মা মুছুদা খাতুন গৃহিণী। সংসারে আয় বলতে বাবার দিনমজুরির সামান্য উপার্জন। পাঁচ শতকের বসতভিটা ছাড়া নেই কোনো জমিজিরাত। এর মাঝেই বড় দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন তারা। পরিবারে সবচেয়ে ছোট মোস্তাফিজ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন বুনেছেন পড়ালেখার মাধ্যমে বড় কিছু হওয়ার।
অভাবের সংসারে শত প্রতিকূলতার মাঝেও এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন তিনি। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩০তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯৫তম এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন মোস্তাফিজ।
তবে তার স্বপ্ন একটাই—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিচারক হওয়া। পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদেই এই স্বপ্ন। কিন্তু উচ্চশিক্ষার শুরুতেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকার অভাব। ভর্তি ফি, বই, জামাকাপড়, আবাসন ও অন্যান্য খরচ মেটাতে যা প্রয়োজন, তা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে পরিবার।
ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, “মোস্তাফিজ আমাদের কলেজের গর্ব। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে সাপোর্ট দিতে। তার যেন ভর্তির সুযোগ হাতছাড়া না হয়, সে জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা দরকার।”
অভিভাবক খোরশেদ আলমের কণ্ঠে করুণ আকুতি, “ছেলেটা নিজের চেষ্টায় এত দূর এসেছে। কিন্তু ভর্তি ফি, থাকার খরচ—এসব কীভাবে যোগাড় করব বুঝতে পারছি না। সরকার, সমাজের দানশীল মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করছি, আমার ছেলের পাশে দাঁড়ান।”
মোস্তাফিজ বলেন, “ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে বড় কিছু হবো। আজ সেই স্বপ্নের ঠিক দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি। যদি একটু সহায়তা পাই, তাহলে হয়তো দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারব।”
এই প্রতিভাবান তরুণের হাত ধরে হয়তো তৈরি হতে পারে ভবিষ্যতের একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক। প্রয়োজন শুধু সহানুভূতির হাতটুকু বাড়িয়ে দেওয়া।
যোগাযোগ:
মোস্তাফিজুর রহমান
মোবাইল: ০১৩৩৩-৮৯৭৩৭৭
Leave a Reply