গান শুধু সুরের ব্যাপার নয়—এটি শব্দ, অনুভব আর শিল্পের সম্মিলন। একজন সফল গীতিকার হতে হলে শুধু শব্দ জোগাড় করলেই হয় না, দরকার একটি সূক্ষ্ম শিল্পবোধ, সংবেদনশীল মন আর কিছু নির্দিষ্ট কলা-কৌশল।
গান লেখার শুরুটা হয় একটি বিষয় দিয়ে। প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি, প্রতিবাদ, উৎসব—যেকোনো কিছু নিয়েই গান লেখা যায়। বিষয়টি নিজের হৃদয়ের কাছাকাছি হলে অনুভব সহজ হয় এবং শ্রোতার মনেও দাগ কাটে।
প্রথমে কয়েকটি চরণ বা লাইন মাথায় ঘোরে—সেগুলোই হয়ে ওঠে গানের বীজ। এই লাইনগুলোকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় পুরো গান। তাই চিন্তার গভীরে গিয়ে শব্দ তুলতে হয়, যেন তা শ্রোতাকে টানে।
স্বাদের পেছনের শিল্প ও সাধনা
একটি গানের প্রাণ তার ছন্দে। মুক্ত ছন্দ বা মাত্রাবদ্ধ—যেটাই হোক না কেন, শব্দচয়ন ও ছন্দে ভারসাম্য থাকা আবশ্যক। ছন্দ গানের সুরে মিশে গিয়ে শ্রুতিমধুর করে তোলে।
একটি গানের সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ হলো তার ‘হুক লাইন’। সেটি হতে পারে রেফ্রেইন বা বারবার ফিরে আসা লাইন। এই লাইনের মধ্যে থাকে গানের প্রাণ, যা শ্রোতার মনে গেঁথে যায়।
গানে অতিরিক্ত কাব্যিকতা মাঝে মাঝে বোঝার অসুবিধা তৈরি করে। আবার অত্যন্ত সাধারণ শব্দেও আবেগ হারিয়ে যেতে পারে। তাই শব্দ ও আবেগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই গীতিকারের দায়িত্ব।
গান লেখার পর সেটি বারবার পড়ে দেখুন। সুরের সাথে মানাচ্ছে কিনা, শব্দপ্রয়োগ সঠিক হয়েছে কিনা, আবেগ ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে কিনা—এসব যাচাই করা জরুরি।
প্রিয় গীতিকারের গান শুনুন, বিশ্লেষণ করুন, অনুপ্রাণিত হোন। কিন্তু একেবারে অনুকরণ করবেন না। নিজের স্বর, নিজের ভাষা তৈরি করাই শ্রেষ্ঠ পথ।
গান লেখা নিছক কিছু শব্দ সাজানো নয়—এটি হৃদয়ের সঙ্গে কথোপকথন। একজন গীতিকার তার অনুভূতিকে শব্দের ছন্দে গেঁথে দেন, যা গায়ক গলায় তুলে শ্রোতার মনের তারে টান দেন। তাই গান লিখতে গেলে দরকার মেধা, মমতা, এবং অনেক সাধনা।
Leave a Reply